বিশেষ প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে বিদ্যমান মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ পরবর্তী আরও ১০ (দশ) বছর বাড়িয়েছে সরকার। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ বিষয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর আগেওঅর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, আইসিবি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে ও বাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য বৈঠকে মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টর থেকে কোন প্রতিনিধিকে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার সুযোগ দেয়া হয়নি।
বিদ্যমান মেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর পরবর্তী মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে জোড়ালো সমর্থন জানিয়েছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এবং পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাজারের নীতিনির্ধারকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো হলো পুঁজিবাজারের প্রাণ। বাজারের ক্রান্তিকালে এই মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো এবং আইসিবি সাপোর্ট দিয়ে থাকে। বর্তমান বাজারের প্রেক্ষাপটে সরকার মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির যে অনুমোদন দিয়েছেন তাতে সার্বিক বাজারচিত্রে ভবিষ্যতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মোঃ হেলাল উদ্দিন সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, মেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজারের ভারসাম্য রক্ষায় আবারো সহায়ক ভূমিকা পালন করলেন। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর খুবই অভাব। সাধারণত মিউচ্যুয়াল ফান্ড ব্যতীত বাজারে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে থাকেনা। তাই বাজার ভারসাম্য রক্ষায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিকল্প নেই।’
জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীনা আহসান মনে করেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড ২০১০-১১ সালের ধস পরবর্তী বাজারে ভারসাম্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সরকার পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে ফান্ডগুলোর মেয়াদ পরবর্তী ১০ (দশ) বছর বৃদ্ধি করায় বাজার আরো স্থিতিশীল হবে।
প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ মোঃ রেজাউল হক বলেন, বর্তমান বাজারের তারল্য সংকট নিরসনে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের এই মেয়াদ বৃদ্ধিও সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বাজারের ক্রান্তিলগ্নে সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
এর আগে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংগঠন “পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন” বাজার ভারসাম্য এবং তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষার্থে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী এর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
জানতে চাইলে সংগঠনটির সভাপতি মোঃ রুহুল আমিন আকন্দ বলেন, আমরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিদ্যমান মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণাকে জোড়ালো সমর্থন জানাই। তা না হলে শুধু আমাদের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের বিনিয়োগই নয় পুঁজিবাজারের অন্যান্য খাতের বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হতো।’
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মোঃ লিয়াকত হোসেন তার মতামত ব্যক্ত করে জানান সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা আবারো সঠিক বিনিয়োগের সুযোগ পেলাম। বাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম ৫-৬ টাকা হলেও অসুবিধা কি? আমিতো এই ফান্ডগুলো ৫-৬ টাকায় কিনে ১০ টাকার উপর ডিভিডেন্ড পাচ্ছি, যার ডিভিডেন্ড ইল্ড প্রায় ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ। তাহলে কেন আমি ৫ টাকায় কিনবো না। এজন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে দোষারোপ করা ঠিক নয়।
আনিস নামের আরেকবিনিয়োগকারী মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ২০১০ সালে ব্যাংক খাতে যে শেয়ারগুলো ১০০ টাকার উপরে কিনেছি তার দাম আট বছর পরে এখনো ২০ টাকায় উঠেনি, কবে উঠবে তাও জানিনা। সেই তুলনায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডে এমন কি ক্ষতি হয়েছে? বরং প্রতি বছর ব্যাংক সুদেও তুলনায় বেশী ডিভিডেন্ড পাই। তবে এটাও বুঝি যে, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করতে হয়। প্রতিদিন বেচাকেনা করে লাভ হয়না।’
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে বর্তমানে প্রায় ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।