স্পোর্টস ডেস্ক : সাকিব আল হাসানই কি সর্বকালের সেরা অল-রাউন্ডার? এবারের বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য ছন্দের কারণে ইতিমধ্যেই ক্রিকেট দুনিয়ায় এই আলোচনা উঠে গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনন্য এক “প্রথম” গড়ে আলোচনাটার পালে আরও জোর হাওয়া লাগালেন সাকিব। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেটের ডাবল গড়লেন সাকিব আল হাসান।
আসলে একটি নয়। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে আরও একগাদা কীর্তি গড়েছেন সাকিব। প্রথমত অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারকে টপকে আবার এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তালিকার শীর্ষে উঠে গেছেন। ৫১ রানের ইনিংস খেলার পথে প্রথম বাংলাদেশি এবং সব দেশ মিলিয়ে ইতিহাসের ১৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ছুঁয়েছেন বিশ্বকাপে ১০০০ রানের মাইলফলক। ৪টি বিশ্বকাপে মোট ২৭ ম্যাচ খেলে তার রান এখন ১০১৬।
১৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১ হাজার রানের মাইলফলক পেরোলেও তিনি এখন এই তালিকার ১৬ নম্বরে। পেছনে ফেলে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার মার্ক ওয়াহ (১০০৪), ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙুলি (১০০৬) ও এতদিন সর্বকালের সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত ক্যারিবীয় কিংবদন্তি স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসকে। যাকে ক্রিকেট দুনিয়া ভিভ রিচার্ডস নামেই বেশি চিনে।
ব্যাট হাতে এই দুই কীর্তির পর বল হাতে নিয়ে গড়লেন আরও বড় বড় কীর্তি। যার মধ্যেিএমন একটি কীর্তি গড়েছেন, যে কীর্তি ইতিহাসের আর কোনো ক্রিকেটারেরই নেই। ভিভ রিচার্ডস, জ্যাক ক্যালিস, ইয়ান বোথাম, ইমরান খান, কপিল দেব, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, শহীদ আফ্রিদি, স্টিভ ওয়াহ, সনাত জয়সুরিয়া— ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক কিংবদন্তি অল-রাউন্ডারের দেখা মিলেছে। কিন্তু তাদের কেউই বিশ্বকাপে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেটের ডাবল গড়তে পারেননি।
ইতিহাসের প্রথম অল রাউন্ডার হিসেবে তা করে দেখালেন সাকিব। ব্যাট হাতে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শের পর “অনন্য এই প্রথম” গড়তে সাকিবের দরকার ছিল ২ উইকেট। সাকিব সেখানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন তিনি।
বল হাতে নিয়ে নিজের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই উইকেটের দেখা পেয়ে যান সাকিব। তামিম ইকবালের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন রহমত শাহকে। এই উইকেটটি নিয়ে অনন্য ওই প্রথমের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশকেও দেন প্রথম ব্রেক থ্রু।
২৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় আফগানিস্তান শুরুটা করেছিল দারুণ। ১০.৪ বলেই তুলে ফেলে ৪৯ রান। আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি বাংলাদেশ শিবিরে পরাজয়ের শঙ্কাই জাগিয়েছিল।
সেই শঙ্কা দূর করতে অধিনায়ক মাশরাফি ইনিংসের ১১তম ওভারে বল তুলে দেন সাকিবের বিশ্বস্ত হাতে। সাকিব প্রথম ওভারেই দূর করেন শঙ্কা। প্রথম স্পেলে আরও একটি ওভার করলেও উইকেট পাননি। দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে আবারও উইকেট পেয়ে যান। লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান বিপজ্জনক হয়ে ওঠা আফগন অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবকে। এই নাইবকে ফিরিয়েই লিখে ফেলেন নতুন ইতিহাস।
গুলবাদিন নাইবকে ফেরানোর এক বল পর মোহাম্মদ নবীকেও বিদায় করেন সাকিব। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ছত্রখান করেন নবীর স্টাম্প। এরপর আসগর আফগান এবং নাজিবুল্লাহ জরদানকে বিদায় করে আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন। প্রশস্ত করেছেন বাংলাদেশের জয়ের পথ।
প্রথম ৭ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। শেষ পর্য ন্ত ১০ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট। এক ম্যাচে যে কীর্তিগুলো গড়লেন, তা নিশ্চিতভাবেই সাকিবকে চির স্মরণীয় করে রাখবে।
বিশ্বকাপে অল রাউন্ড পারফরম্যান্সে তার নিকটবর্তী শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক সনাত জয়সুরিয়া। যিনি ৪টি বিশ্বকাপে মোট ৩৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ১১৬৫ রান। সঙ্গে উইকেট নিয়েছেন ২৭টি। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ ৩টি বিশ্বকাপে ৩৩ ম্যাচ খেলে ৯৭৮ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ২৭ উইকেট।
বাকি কিংবদন্তিরা আরও অনেক পেছনে। সেখানে মাত্র ২৭ ম্যাচেই সাকিবের নামের পাশে ১০১৬ রান ও ৩৩ উইকেট!
কি সর্বকালের সেরা অল রাউন্ডারের মুকুটটা সাকিবের মাথায় পরিয়ে দেবেন নাকি?