বিশেষ প্রতিবেদন: ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজারে আসছে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরন অঞ্চলের (ডিইপিজেড) সবচেয়ে বেশি জায়গাজুড়ে ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রিং সাইন টেক্সটাইল। বিদেশী উদ্যোক্তা/পরিচালকদের দ্ধারা পরিচালিত কোম্পানিটি শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে পরিদর্শনে এ চিত্র দেখা গেছে।
প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বস্ত্রখাতের রিংসাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের শেয়ার আগামীকাল ১২ ডিসেম্বর দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরু হবে।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ৪৪০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী রিং সাইন টেক্সটাইল ১৯৯৭ সালে প্রাইভেট কোম্পানি হিসাবে গঠিত হয় । এরপরের বছর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে কোম্পানিটি। ২০১৭ সালের ০৮ জুন কোম্পানিটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২৮৫ কোটি ৫ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা।
প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়াবে ৪৩৫ কোটি ৫ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা। কারণ কোম্পানিটি ১০ টাকা ইস্যু মূল্যে ১৫ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করছে। কিন্তু কোম্পানিটির ৬০৬ কোটি ৭৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৯৮ টাকার প্রপার্টি প্লান্ট অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট রয়েছে। প্রসপেক্টাসের তথ্যানুযায়ী, ৩০ জুন ২০১৮ শেষে কোম্পানিটির ৬১৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকার স্থায়ী ও ৫৯৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার চলতি সম্পদ রয়েছে।
বর্তমান রিং সাইনের ২৮৫ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিতে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের মালিকানা রয়েছে ৪৮.১৪ শতাংশ। যেসব শেয়ার বিক্রয় উপযুক্ত হতে লেনদেনের প্রথম দিন থেকে ৩ বছর লাগবে।
কোম্পানিটি বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করতে যাচ্ছে। এরমধ্যে ৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিয়ে মেশিনারীজ ক্রয়, ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ বাবদ ব্যয় হবে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
ডিইপিজেড সবচেয়ে বড় কোম্পানি
সাভারের গণকবাড়িতে ঢাকা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) কোম্পানিটির কারখানা অবস্থিত। ঢাকার ইপিজেডে অবস্থিত রিং সাইনের রেজিস্টার্ড অফিস ও কারখানা। ইপিজেডের মোট ৩০০টি প্লটের মধ্য থেকে ৬০টি প্লট বা ২০ শতাংশ নিয়ে ৩০ বছর মেয়াদে ইজারা নিয়ে ব্যবসা করছে রিং সাইন কর্তৃপক্ষ। যা শুরু হয়েছে ১৯৯৮ সালের ১ মার্চ। যে ইজারার মেয়াদ নবায়নের মাধ্যমে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
ইপিজেডে মোট ২১ হাজার ৪৩৪ শতাংশ জায়গা রয়েছে। এরমধ্যে রিং সাইনের ইজারা নেওয়া আছে ৩ হাজার ৩৮ শতাংশ বা ৯২ বিঘা। যা ইপিজেডের মোট জায়গার ১৪.১৭ শতাংশ। এই ৯২ বিঘা জমিতে রিং সাইনের ১২টি নিজস্ব ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলোর আয়তন ১১ লাখ ২৮ হাজার ২৭৪ স্কয়ার ফুট। যেখানে নতুন মেশিনারীজ স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে।
কোম্পানির পরিচালনার দায়িত্বে আছেন যারা
রিং সাইনের পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সবাই বিদেশী। চেয়ারম্যান হিসাবে সুং জি মিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুং ওয়ে মিন রয়েছেন। এছাড়া পরিচালক হিসাবে হেং সিউ লাই, হসিয়াও হায় হে, সুং ওয়েন লি এঞ্জেলা, সু চুং আও, সিয়াও ইয়েন সিন, হসিয়াও লিউ ই চি ও চুক কাউন রয়েছেন। তারা সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ও হংকংয়ের নাগরিক।
আর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে বাংলাদেশ থেকে রয়েছেন মো. নিয়ামুল হাসান কামাল, মো. হুসাইন শাহ জাবেদ ও মোহাম্মদ মনিরুল হক।
এছাড়া কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. মাহফুজুর রহমান ও কোম্পানি সচিব (সিএস) আশরাফ আলী।
প্রতিযোগী কোম্পানি ও তাদের ব্যবসায়িক অবস্থা
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে রিং সাইনের প্রতিযোগিদের মধ্যে রয়েছে কুইন সাউথ টেক্সটাইল, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, এমএল ডাইং, নূরাণি ডাইং ও আনলিমা ইয়ার্ন ডাইং। এরমধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রিং সাইনের ১ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রির নিকটতম প্রতিযোগি কুইন সাউথের বিক্রি হয়েছে ২৭৯ কোটি টাকা। আর শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ২১৩ কোটি টাকা, এমএল ডাইংয়ের ১৮০ কোটি টাকা, নূরাণি ডাইংয়ের ৮৮ কোটি টাকা ও আনলিমা ইয়ার্নের ১৪ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে।
কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতা ও ব্যবহার
কোম্পানিটির ৪টি ইউনিটে সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা ৫ কোটি ৭৮ লাখ কেজি। এর মধ্যে ৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি স্পিনিং এক্রাইলিক ইয়ার্নে সর্বোচ্চ ৯৭.৩৯ শতাংশ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করে। স্পিনিং এক্রাইলিক ইয়ার্নের উৎপাদন ক্ষমতা ৫১ লাখ কেজি। গত বছরে এ ইউনিটে ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার ১৪২ কেজি উৎপাদন হয়েছে।
ডাইং ইয়ার্ন- এক্রাইলিক অ্যান্ড কটন বেইজডে ইউনিটে রিং সাইন টেক্সটাইলের উৎপাদন ক্ষমতা ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি। ৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি ২ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৭৬ কোজি বা ৮১.৮৫ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করেছে।
ফ্লিচ ফেব্রিকর্স নিটিংয়ের (যার মাধ্যমে কম্বল জাতীয় পোশাক তৈরি হয়) উৎপাদন ক্ষমতা ১ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার কেজি। ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি উৎপাদন সক্ষমতার ৭৬.৯৩ শতাংশ বা ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার ১৮৪ কেজি ব্যবহার করেছে।
এছাড়া ফ্লিচ ফেব্রিকর্স ডাইং অ্যান্ড ফিনেশিং ইউনিটে উৎপাদন ক্ষমতা ১ কোটি ৩০ লাখ কেজি। এ ইউনিটে ৮৯ লাখ ৭১ হাজার ৫৪২ কেজির উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করা হয়েছে।
কর্মচারী-কর্মকর্তার সংখ্যা
রিং সাইনে ইয়ার্ন, স্পিনিং, ফ্লিচ ফেব্রিক নিটিং ও ফ্লিচ ফেব্রিক ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং উৎপাদন ও বাজারজাতকরন করা হয়। এই কোম্পানিটিতে ২ হাজার ৪৯৮ জনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর দল রয়েছে।
ক্রমাগত ব্যবসায়ীক মুনাফার উল্লম্ফন
২০১৩ সালের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে মুনাফার উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। ২০১৩ সালে কোম্পানিটির ৭৮০ কোটি টাকার বিক্রয় হয়েছে। ৫ বছরের ব্যবধানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ৯৯৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা অতিক্রম করেছে। এসময় কোম্পানিটির বিক্রয় বেড়েছে ২২০ কোটি টাকার বা ২৮ শতাংশ। এই বিক্রয়ের সঙ্গে কোম্পানিটির ২০১৩ সালের ৪০ কোটি টাকার মুনাফা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ।
কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমাদের কারখানায় ২ হাজারের অধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। ডেনিম কারখানা শুরু হলে সেখানে আরো ২০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। কারখানায় শ্রমিকদের সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, অধিক শ্রমিক হওয়ায় কারখানায় কোন ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই তাদেরকে দুপুরের খাবারের জন্য ৪৫ টাকা করে দেয়া হয়। যারা রাতের শিফটে কাজ করে তাদের জন্য নাস্তা পরিবেশন করা হয়।