নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই মিউচুয়াল ফান্ড থেকে এলআর গ্লোবাল অ্যাসেট মানেজমেন্ট কোম্পানিকে অপসারণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সিদ্ধান্তে স্থগিতাদের দিয়েছে হাইকোর্ট। সম্প্রতি এলআর গ্লোবালের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিএসইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। একই সঙ্গে বিএসইসির সিদ্ধান্তকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর গ্রীনডেল্টা ও ডিবিএইচ প্রথম মিউচুয়াল ফান্ডের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইউনিটধারীর লিখিত মতামত ও ট্রাস্টির আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পদ ব্যবস্থাপকের পদ থেকে এলআর গ্লোবালকে অপসারণ এবং নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের নিয়োগে অনুমোদন দেয় বিএসইসি। বিএসইসির এ সিদ্ধান্ত পুনঃপর্যালোচনার আবেদন জানায় এলআর গ্লোবাল। এ আবেদনের শুনানি শেষে এলআর গ্লোবালের আবেদন খারিজ করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেয় বিএসইসি। বিএসইসির এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানালে গত ১১ ফেব্রুয়ারি আদালত তাতে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়।
হাইকোর্টের এ আদেশের ফলে ওই দুই মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া আপাতত থমকে গেল। তবে বিএসইসি জানিয়েছে, হাইকোর্টের এ স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি আপিল করবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের আগস্টে এলআর গ্লোবাল পরিচালিত বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সালে উন্নীত করা হয়। তবে ফান্ড ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ডিবিএইচ প্রথম ও গ্রীনডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তাসহ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইউনিটধারী সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনের চিঠি দেয় ট্রাস্টি বিজিআইসিকে। ট্রাস্টি প্রক্রিয়াটি শুরু করার মধ্যেই গ্রীনডেল্টা ও ডিবিএইচ মিউচুয়াল ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তন কিংবা অপসারণের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করে এলআর গ্লোবাল।
নিম্ন আদালত এ মামলায় কারণ দর্শানোর নোটিস দিলেও সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনে কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ কিংবা স্থগিতাদেশ দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে এলআর গ্লোবাল আপিল করলে সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থার আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে বিএসইসি ও প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিটধারীরা আপিল করলে চেম্বার জজ হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ দেয়, যা ৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ বহাল রাখে।
এরপর গত ২২ ডিসেম্বর গ্রীনডেল্টা ও ডিবিএইচ প্রথম মিউচুয়াল ফান্ডের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ইউনিটধারীর লিখিত মতামত ও ট্রাস্টির আবেদনের প্রেক্ষিতে সম্পদ ব্যবস্থাপকের পদ থেকে এলআর গ্লোবালকে অপসারণ ও নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে আইডিএলসি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের নিয়োগে অনুমোদন দেয় বিএসইসি। পরবর্তীতে ওই দুই ফান্ডের সব ধরনের লেনদেন ও বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বন্ধ করার জন্য এলআর গ্লোবালকে নির্দেশ দেয় ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি)।
পাশাপাশি ফান্ড দুটির ব্রোকারেজ হাউজের সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় হিসাব ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে ওই দুই ফান্ডের সব ব্যাংক হিসাব, চেকবই ও ২৩ ডিসেম্বর ধারণকৃত সব ইউনিটহোল্ডারের তালিকা হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে। এরপরই সম্পদ ব্যবস্থাপক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বিএসইসিতে আবেদন জানায় এলআর গ্লোবাল। এ প্রেক্ষিতে শুনানিতে ডেকে পাঠায় বিএসইসি। তবে শুনানিতে এলআর গ্লোবালের জবাবে কমিশন সন্তুষ্ট হতে না পারায় তাদের পুনর্বিবেচনার আবেদনটি খারিজ করে দেয় বিএসইসি।
এর বাইরে কমিশনের অনুমোদন ছাড়া বিধিবহির্ভূত বিনিয়োগ করায় এলআর গ্লোবালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।