নিজস্ব প্রতিবেদক: নয়মাস আগে ভারতে ঘুরতে গিয়ে সেখানকার নাগরিক মো. মোহসিনের সাথে বিয়ে করেন সোনিয়া আক্তার। চলতি মাসের (ফেব্রুয়ারি) ১৭ তারিখে স্বামীর কাছে একবারে যাওয়ার কথা ছিল তার। তবে পাসপোর্ট প্রস্তুত না হওয়ায় আর যেতে পারেননি।
পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই ভারতে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন সোনিয়া। কিন্তু স্বামীর কাছে আর যাওয়া হলো তার। এর আগেই মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে মহাখালীতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সোনিয়া ও তার বান্ধবী সৈয়দা কচি।
বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে এসব তথ্য জানান সোনিয়ার মা মনোয়ারা বেগম।
আহাজারি করতে করতে মনোয়ারা বলেন, আমার মেয়েটার এইভাবে প্রাণ যাবে ভাবতেও পারিনি। কত আশা ছিল ভারতে স্বামীর কাছে যাবে কিন্তু যাওয়া হলো না। লাশ হয়ে এই মর্গে চলে এলো।
সোনিয়ার মা জানান, মোবাইল ফোনে গতকাল বিকেলে সোনিয়ার সাথে কথা হয়। সে জানায় বিকেল ৪টায় বান্ধবী কচির বাসা থেকে বনানীতে আরেক বান্ধবী লিলির বাসায় গিয়েছে। রাতে সেখান থেকে কচির বাসায় ফিরে যাবে। আমার মেয়েটা কচির সাথেই সব সময় চলাফেরা করতো। মাঝে মধ্যে কচির বাসায়ই থাকতো।
ভোলার মাছবেদুরিয়া গ্রামের রুহুল আমিনের মেয়ে সোনিয়া। তার বাবা শাহ আলী এলাকায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করেন। তারা শাহআলীর কাজীপুরী-গুদারাঘাট এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সোনিয়া তৃতীয়। চাকরি করতো অনলাইন ভিত্তিক প্রসাধনী ব্যবসায়।
মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় নিহত আরেকজন সোনিয়ার বান্ধবী সৈয়দা কচি (৩৮)। পরিবারকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করার আশায় গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে আট বছর আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন কচি। বাবা না থাকায় দুই বোন মিলে ধরেছিলেন সংসারের হাল। পরিবারের দেখাশোনা করতে গিয়ে বিয়েও করা হয়নি কচির।
দুর্ঘটনাস্থলে কচির নিথর দেহের পাশেই পাওয়া যায় তার কর্মস্থলের আইডি কার্ড। তাতে কচির পূর্ণাঙ্গ নাম উল্লেখ ছিল- দুলদানা আক্তার কচি। আর্ন্তজাতিকমানের কসমেটিকস পণ্য বিপণন ও বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান পার্ল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টেরিটরি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এই নারী। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম দেয়া সৈয়দা কচি।
জানা গেছে, নিহত কচি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভার বাজিতপুর এলাকার মৃত সৈয়দ ফজলুল হকের মেয়ে।
দুর্ঘটনার পর সড়কে পড়ে থাকা নিহতদের রক্তাক্ত নিথর দেহের কিছু ছবি মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে ওই ছবি দেখার পরই গ্রাম থেকে পরিচিত এক ব্যক্তি ফোন করে ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা কচির মামা অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন ভূঁইয়ার কাছে বিষয়টি জানান। পরে বুধবার সকালে অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ভাগ্নির মরদেহ শনাক্ত করেন।
নুরুল আমিন বলেন, দুই বোনের মধ্যে কচি ছোট। ওর বড় বোনের নাম চুমকি। বাবা মারা যাওয়ার পর বোনেদের উপার্জনেই সংসার চলতো। আট বছর আগে ঢাকায় এসে পার্ল ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে চাকরি শুরু করে কচি। বিয়ে করেনি সে, কল্যাণপুরে একরুমের একটি ভাড়া বাসায় থাকতো। চলাফেরার সুবিধার জন্য স্কুটি কিনেছিল, সেটি নিয়েই অফিসে যাতায়াত করতো।
তিনি আরো বলেন, কচি প্রতিদিন সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে যেত, আবার রাত ১১টার আগেই বাসায় ফিরতো। কচির সাথে আরেকটা মেয়ে যে মারা গেছে, ওর নাম সোনিয়া। ওরা দুজন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। কচিদের গ্রামের বাড়িতেও কয়েকবার গিয়েছে সোনিয়া। সেও একটি চাকরি করতো, থাকতো শাহআলী থানার পাশেই একটি বাসায়।