নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বরাবরই অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় ভালো ব্যবসা করে থাকে। তবে এবার করোনার কারণে তাদের ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে। এর পর দুই মাসেরও বেশি সাধারণ ছুটি শেষে আবারো অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি এদেশে চালু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বেশ কয়েকটি বহুজাতিকের আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবিসি), লিন্ডে বাংলাদেশ, বাটা সু, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ইত্যাদি। অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার ও অনলাইনে বিক্রি বাড়ানোর ফলে সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবসা কিছুটা ভালো হয়েছে।
বহুজাতিক জায়ান্ট বিএটিবিসি চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকার সিগারেট পণ্য বিক্রি করেছে। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার ১১ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে ৭.৪৫ শতাংশ। তবে বছরের প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির বিক্রি সার্বিকভাবে বেড়েছে। তিন প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। প্রথম নয় মাসের ব্যবসায়িক ফলাফলের ভিত্তিতে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৩০০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৭২ কোটি টাকায়, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৬৬ কোটি টাকা। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ৮৭২ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪৭ কোটি টাকা।
বহুজাতিক জুতা উৎপাদক কোম্পানি বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের মোট বিক্রি ছিল ১৪০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১৭১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি কমেছে ১৮ শতাংশ। বছরের প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৩৪৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এ বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬২৮ কোটি টাকা। বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ৫১ কোটি টাকা কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে এ লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি টাকায়।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস উৎপাদক লিন্ডে বাংলাদেশের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১৩৯ কোটি টাকা। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির মোট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকায়। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪২৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৩৪ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা হয়েছিল ২৯ কোটি টাকা। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে মুনাফা হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৮৫ কোটি টাকা।
সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের বিক্রি চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ২৫১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ২৫২ কোটি টাকা। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির বিক্রি কমেছিল ৩৮ শতাংশ। সে হিসেবে তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ব্যবসা অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বছরের প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির মোট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৮১১ কোটি টাকায়, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯০০ কোটি টাকা। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকায়। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির মোট লোকসান হয়েছে ১৭ কোটি টাকা।
ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্যবসা বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেই (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ঘুরে দাঁড়ায়। তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৬২৫ কোটি টাকা, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৫৩৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৪৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৪ কোটি টাকা। তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা, আগের বছরের একই সময়ে এ মুনাফার পরিমাণ ছিল ৯৫ কোটি টাকা।