ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
Sharenews24

এস আলমের চার ব্যাংকের বেপরোয়া ঋণ

২০২৩ আগস্ট ১৬ ১১:০৩:১২
এস আলমের চার ব্যাংকের বেপরোয়া ঋণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমানতকারীর ঝুঁকি কমানো এবং ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ঋণ দেয়া বন্ধে একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সীমা লঙ্ঘন করে আগ্রাসী ঋণ দিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পগ্রপ এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ৪ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা ঋণ-আমানতের অনুপাতসীমা (এডিআর) নিয়ে জুনের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারে বা বিনিয়োগ করতে পারে। ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সীমা এক্ষেত্রে ৯২ টাকা পর্যন্ত। অনেক ব্যাংক এ সীমা লঙ্ঘন করে ১০০ শতাংশের বেশি ঋণ দিয়েছে। অর্থাৎ তারা ১০০ টাকার বিপরীতে ১০০ বা তার বেশি টাকা ঋণ দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এস আলমের মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (শরিয়াহ শাখা) ঋণ দিয়েছে সর্বোচ্চ ১২৪.৩৮ শতাংশ। ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইনি সীমার বাইরে বিনিয়োগ রয়েছে বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১০৮.৫৩ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৯.৫৩ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ১০১.৮৭ শতাংশ।

অথচ দীর্ঘদিন থেকেই ঋণ পাচ্ছে না ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা। নানামুখী সঙ্কট দেখিয়ে অনেক ব্যাংক এই সময়ে ঋণ দিচ্ছে না। ঋণ বঞ্চিত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মতে, তারপরও কী করে এই ব্যাংকগুলোর ঋণ গেল আর তা কোথায় গেল তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে অনুৎপাদনশীল খাতে যেন অতিরিক্ত ঋণ না যায় সেই বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্ধারিত ঋণসীমা সম্পর্কে সাবেক তত্তাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ-আমানত অনুপাতের সীমা (এডিআর) নির্ধারণ করে দেয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এটি মানতে বাধ্য। যদি কোনো ব্যাংক এ সীমা লঙ্ঘন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পাশাপাশি যেসব ব্যাংক সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের ঋণ দেয়ার সীমা কমিয়ে দ্রæত এডিআর সমন্বয় করা দরকার। সীমার বাইরে ঋণ দেয়া মানে আমানতকারী ঝুঁকিতে আছে। কারণ ব্যাংকগুলো বেশি ঋণ দিলো, কিন্তু তাদের আমানত নেই- এমন অবস্থায় সঠিক সময়ে তারা দায় পরিশোধ করতে পরবে না। যখন দায় পরিশোধে ব্যর্থ হবে তখন ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এতে মানুষ ব্যাংকে টাকা জমানো কমিয়ে দেবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, এডিআর বেড়ে যাওয়া মানে সবাই বেশি ঋণ দিয়েছে তা নয়। অনেক সময় আমানত ওঠালে ঋণের রেশিও বেড়ে যায়। আবার ব্যাংকের মূলধন আছে, অতিরিক্ত প্রভিশন রাখা আছে, এগুলো ব্যবহার করে। তাই এটা বিশ্লেষণ না করে সরাসরি কিছু বলা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ-আমানতের শৃঙ্খলার জন্য একটা সীমা বেঁধে দিয়েছে, যেন ব্যাংকগুলো এর মধ্যে থাকে। যারা সীমার চেয়ে বেশি ঋণ দেবে তাদের তারল্য সংকট তৈরি হবে। এখন কিছু ব্যাংক এ সীমার বাইরে আছে। তাদের মধ্যে কিছু ব্যাংক আগে থেকেই সমস্যাগ্রস্ত। অনেকের আমানত কমে গেছে। যেসব ব্যাংক এই সমস্যায় আছে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে (ক্লোজ মনিটরিং) রাখা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকে সমন্বয়ক বসানো আছে। যেখানেই সমস্যা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই ব্যাংকে সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তারা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের কাজ করছেন।

আমানত ও বিনিয়োগে (ঋণ) কার কী অবস্থান

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪২৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। যা মোট আমানতের ৭৮.৫১ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ১০০ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৯২ টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকলেও ৪টি ব্যাংক এ সীমা লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আমানত ৪৫ হাজার ৯১ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাদের জমা আছে তিন হাজার ১১২ কোটি টাকা। আর বিনিয়োগ করেছে ৫৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইডিএফ থেকে অর্থায়ন করেছে ১৩১৯ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০৮.৫৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের (শরিয়াহ শাখা) আমানত ১৬২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের জমা আছে ৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি ঋণ দিয়েছে ২৪০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ব্যাংকটির এডিআর ১২৪.৩৮ শতাংশ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এডিআর ৯৯.৫৩ শতাংশ। তাদের আমানত ১১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। বিনিয়োগ ১২ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।

ইউনিয়ন ব্যাংকের আমানত ১৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা চার হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। তাদের বিনিয়োগ ২৩ কোটি ৪৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তারা ইডিএফ থেকে অর্থায়ন করেছে ১৪২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০১.৬৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ক্ষুদ্র খামারিদের ঋণ প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্তেও অনেক ব্যাংকই ঋণ দিচ্ছে না। আবার নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হলে কোন ধরণের কাগজপত্র ছাড়াই মিলছে বড় অঙ্কের ঋণ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকে বিষয়গুলো বলে আসলেও কোন লাভ হচ্ছে না।

শেয়ারনিউজ, ১৬ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে