নিজস্ব প্রতিবেদক : মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা আজ বুধবার (২১ জুলাই) অনুষ্ঠিত হবে। করোনভাইরাস মহামারির কারণে গতবারের মতো এবারও বিধিনিষেধের মধ্যে ঈদ উদযাপন করছে মুসলিমরা।
ঈদকে ঘিরে মুসলমানদের যে আনন্দ ও প্রাণচঞ্চলতা থাকে সেই আনন্দ যেন ম্লান করে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছে মুসলিম উম্মাহ।
ঈদুল আজহা পালনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তবে করোনার কারণে গত তিনটি ঈদের ন্যায় এবারও হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং হাত মেলানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ঈদের জামাত বিষয়ে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে।
করোনার সংক্রমণ এড়াতে এবারও দেশের ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দান শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার জামাত হচ্ছে না। কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেট ভবনে অনুষ্ঠিত ১৯৪তম ঈদুল আজহার প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার এ সিদ্ধান্ত হয়।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের নামাজ আদায় করতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ বড় বড় মসজিদগুলো এরই মধ্যে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে। মসজিদের ইমাম ও খাদেমরা জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে, সেজন্য সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। পাঁচটি জামাতে মুসল্লিরা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য একটি কাতার বাদ দিয়ে অন্য কাতারে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বায়তুল মোকাররমে ঈদের পাঁচ জামাত
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম জামাত : সকাল সাতটায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান, মুকাব্বির হিসেবে থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আতাউর রহমান।
পঞ্চম ও শেষ জামাত : সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। শেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ূর রহমান খান। তার সঙ্গে মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. শহীদুল্লাহ।
এ পাঁচটি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদে সকাল আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন।
ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে সকাল সাড়ে সাতটা ও সকাল নয়টায়; ধানমণ্ডির বায়তুল আমান মসজিদে সকাল সাড়ে আটটায়; ঈদগাহ মাঠ মসজিদে আটটায় এবং সোবহানবাগ জামে মসজিদে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদ জামাত হবে।
আজিমপুর কবরস্থান মসজিদে সকাল সাতটা, আটটা, নয়টা ও ১০টায় মোট চারটি জামাত হবে। মিরপুর দারুস সালাম লালকুঠি বড় মসজিদে সকাল সাতটায় একটি জামাত হবে।
গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ছয়টা, সাড়ে সাতটা এবং সাড়ে নয়টায় এসব জামাত অনুষ্ঠিত হবে। পুরান ঢাকার চকবাজার শাহী মসজিদে সকাল আটটা ও নয়টায় দুটি জামাত হবে। বড় কাটারা মাদরাসা মসজিদে একটি ঈদ জামাত হবে সকাল আটটায়। লালবাগ শাহী মসজিদে সকাল সাড়ে আটটায় একটি জামাত হবে।
পুরান ঢাকা তারা মসজিদে সকাল সাড়ে আটটা ও নয়টায়, রায়সাহেব বাজার জামে মসজিদে সাড়ে আটটায়, নিমতলী ছাতা মসজিদে সকাল আটটা ও নয়টায়, আগামছি লেন জামে মসজিদে সকাল সাড়ে সাতটা ও সাড়ে আটটায় এবং বায়তুল মামুর জামে মসজিদে সকাল সোয়া আটটা ও নয়টায় ঈদের জামাত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া মহাখালীর মসজিদে গাউসুল আজমে তিনটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
ঈদের জামাত আদায়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ১২ নির্দেশনা
১) করোনা সংক্রমণের স্থানীয় পরিস্থিতি ও মুসল্লিদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা ও সমন্বয় করে ঈদুল আজহার জামাত মসজিদ নাকি ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঈদের নামাজ আদায়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
২) মসজিদে ঈদের নামাজ আয়োজনের ক্ষেত্রে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন।
৩) প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদ/ঈদগাহে আসতে হবে। ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৪) করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে মসজিদ ও ঈদগাহে ওজুর স্থানে সাবান, পানি ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
৫) মসজিদ/ঈদগাহ মাঠের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/ হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে।
৬) ঈদের নামাজের জামাতে আগত প্রত্যেক মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৭) ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে।
৮) শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিতদের ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করা হলো।
৯) সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
১০) ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি এবং পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।
১১) করোনা মহামারির এ বৈশ্বিক মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেতে বেশি বেশি তওবা, আস্তাগফিরুল্লাহ ও কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে এবং ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
১২) খতিব, ইমাম, মসজিদ/ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।