নিজস্ব প্রতিবেদক : ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (এমইসি) একদল প্রাক্তন ছাত্র তাদের রকেটের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে আলোচনায় এসেছে। তরুণ প্রকৌশলীরা চারটি প্রোটোটাইপ রকেট তৈরি করেছেন। রকেটের নাম করেছেন ধূমকেতু-১ এবং ধূমকেতু-২ হিসাবে। তবে এই রকেটগুলি উৎক্ষেপণযোগ্য কিনা তা পরীক্ষা করা হয়নি। এ জন্য সরকারের কাছে সাহায্য চাইছেন এসব প্রকৌশলী।
প্রকৌশল দলের দাবি, এটি সম্প্রচার, যোগাযোগ, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। রকেটটি প্রকৃতি রক্ষা এবং খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য একটি দুর্দান্ত হাতিয়ার হিসাবেও কাজ করবে।
বিশ সদস্যের ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র নাহিয়ান আল রহমান। তার বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। এই ইঞ্জিনিয়াররা ২০১৯ সালে শুরু হওয়া তিন বছরের গবেষণায় প্রাথমিক সাফল্যের শিখর বলে দাবি করেন। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ময়দানে আকাশে প্রথম পা দেওয়া ধূমকেতু-১ রকেটটি স্থাপন করা হয়েছে। অপেক্ষা শুধু সরকারের অনুমতির।
জানা গেছে, নাহিয়ান আল রহমান ছোটবেলা থেকেই প্লেন ও রকেট বানানোর নেশায় ছিলেন। সে সময় এই স্বপ্নের ডানা না মেলে তবে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির পর তার স্বপ্নের ডানা মেলে। নাহিয়ান তার সহপাঠী নিয়মুল ইসলামের সাথে তার স্বপ্নের কথা জানায়। নিয়ামুলও এতে রাজি হন। সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন সাইদুর, নাদিম, লিয়ান, আবরার, রিজু, বিন্দু, নাঈম, আশরাফসহ আরও অনেকে। শুরু হয় রকেট নির্মাণের গল্প।
তারপর সময়টা ২০২১। এরপর তিনি দেশ-বিদেশের সুপরিচিত বড় ভাই-বোনদের কাছ থেকে রকেটে বই সংগ্রহ করতে থাকেন। এভাবে চার শতাধিক বই নিয়ে গবেষণা করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু টাকার অভাবে রাস্তার মাঝখানে পড়ে যান। তবে থেমে থাকেনি এই স্বপ্নবাজ তরুণরা।
এরপর আবার ২০১৯ সালে ব্যক্তিগতভাবে অর্থ সংগ্রহের পর ২০ জনের একটি দল নিয়ে শুরু হয় রকেট তৈরির কাজ। এভাবে ২০২১ সালের শেষের দিকে তিনি রকেট তৈরির কাজ শেষ করেন।
উদ্যোক্তারা বলছেন, এখনই সরকারের সহযোগিতা ও অনুমতি প্রয়োজন। তবেই স্বপ্নের এই রকেট আকাশে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে।
রকেটের উন্নয়ন সম্পর্কে, দলের নেতা নাহিয়ান বলেন যে তরল জ্বালানী ইঞ্জিনগুলি প্রাথমিকভাবে রকেটের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে করোনা মহামারির কারণে তরল অক্সিজেনের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ প্রকল্প চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। একটি বিকল্প হিসাবে, ৪০০ নিউটন এবং ১৫০ নিউটনের দুটি কঠিন জ্বালানী ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছিল এবং রকেটের আকার ছোট করা হয়েছিল। বর্তমানে ৬ ফুট এবং ১০ ফুটের আরও দুটি প্রোটোটাইপ রকেট উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দুটি ৬-ফুট-উচ্চ ১৫০ নিউটন ফোর্স রকেটের রেঞ্জ প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং অন্য দুটি ৪০০-নিউটন ফোর্স রকেটের ১০ ফুট উচ্চতা প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
তিনি বলেন, আমি আমার স্বপ্ন পূরণের প্রথম পর্যায়ে আছি। সরকারের অনুমতি নিয়ে যেদিন এই রকেট উৎক্ষেপণ করতে পারব, সেদিনই এই স্বপ্ন পূরণ হবে। যাইহোক, যদি আমরা সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর এই রকেটটি অবতরণ করতে পারি তবে স্বপ্নটি শতভাগ সফল হবে। তাই সরকারের সহযোগিতাই মুখ্য। একইসঙ্গে বাংলার আকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবে দেখতে চাই।
টানা তিন বছর ধরে গবেষণা করে আসা ল্যাবরেটরিটির নাম আলফা সায়েন্স ল্যাব। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংলগ্ন ল্যাবরেটরি পরিদর্শন করছিলেন ময়মনসিংহ পৌর কর্পোরেশনের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সমন্বয়ক এম এ ওয়ারেশ বাবর।
তিনি বলেন, নগরীর মেয়র ইকরামুল হক টিটু রকেট উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মেমনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সালাউদ্দিন বলেন, অধিদফতরের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন সেখান থেকে অনুমতি পেলে চিঠি যাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই মুখ্য। তবে আমরা আশা করি, সরকার দেশের স্বার্থে স্বপ্নবাজ তরুণদের পাশে দাঁড়াবে।
কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর কবির বলেন, রকেট ইনোভেশনের বিষয়টি দেশের জন্য আশার বাণী। কিন্তু এখন এটি সফল উৎক্ষেপণের জন্য সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। আমি মনে করি অনুমতি দিলে দেশে অনুসন্ধানের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আলফা সায়েন্স ল্যাবের এসব শিক্ষার্থীদের অতীতে অনেক রোবোটিক্স প্রকল্প সফল হয়েছে। তিনি নভেম্বর ২০১৯ সালে টেকফেস্টের নির্বাচনে জয়ী হন। পরে তিনি ভারতের বিখ্যাত আইআইটি-তে অনুষ্ঠিত টেকফেস্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানেও সেমিফাইনালে জায়গা করে নেন টপ-৫ এ।