নিজস্ব প্রতিবেদক : এক বছরের ব্যবধানে ডিভিডেন্ডে কোন জৌলুস নেই। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে শেয়ার দরে জৌলুস দেখা মিলেছে শেয়ারবাজারে তালিকভুক্ত দুই কোম্পানির। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে চমক হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে শেয়ার কারসাজিরও। কোম্পানি দুটির মধ্যে রয়েছে আরডি ফুড লিমিটেড এবং সালভো কেমিক্যালস লিমিটেড।
সালভো কেমিক্যালস: সর্বশেষ ৩০ জুন ২০২১ সমাপ্ত অর্থবছরে সালভো কেমিক্যালস কোন রকমে বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কিন্তু গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৫১ টাকা বা ৩৯২ শতাংশ। এক বছরে আগে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিলো ১৩ টাকা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৪ টাকায়।
কোম্পানিটির এমন অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে প্রান্তিক প্রতিবেদনে ইপিএস বেশি দেখানোকে মনে করলেও, কোম্পানিটির ইপিএস তথ্য সঠিক কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। তারা বলছেন, শেয়ারদর বাড়িয়ে কারসাজি করার জন্যই ইপিএস বেশি দেখানো হয়েছে। যে কারণে শেয়ারটি এখন বিনিয়োগকারীদের সামনে লাভের চেয়ে লোকসানের ফাঁদই বেশি।
সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিক বা তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২১) সালভো কেমিক্যালস শেয়ার প্রতি আয় দেখিয়েছে ৮০ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিলো ১০ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৭০ পয়সা বা ৭০০ শতাংশ।
একইভাবে, দুই প্রান্তিক বা ছয় মাসে (জুলাই’২১-মার্চ’২২) শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়েছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিলো ৩০ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ১ টাকা ০৫ পয়সা বা ৩৫০ শতাংশ। যেখানে কোম্পানিটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে ইপিএস দুই অঙ্কের মধ্যে আটকে ছিল, সেখানে দুই প্রান্তিকেই ১ টাকা ৩৫ পয়সার মুলা ঝুলানো হয়েছে।
গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটির ডিভিডন্ড ঘোষণায় দেখা যায়, ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। তারপরের বছরও ৫ শতাংশ বোনাস। ২০১৯ সালে ‘নো ডিভিডেন্ড‘। তারপরের বছর ২০২০ সালে ১ শতাংশ ক্যাশ। সর্বশেষ ২০২১ সালে ৩ শতাংশ ক্যাশ ও ৩ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড।
মুনাফার দিক থেকে দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মুনাফায় সামান্য স্বস্তি থাকলেও ২০২০ সাল থেকে মুনাফায় পিছুটানে রয়েছে। ২০১৭ কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৭৯ পয়সা, ২০১৮ সালে ৭৮ পয়সা এবং ২০১৯ সালে ৬১ পয়সা। তারপরের দুই বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ৩০ পয়সা এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ৩৪ পয়সা। অথচ চলতি অর্থবছরের দুই প্রান্তিকেই ইপিএস দেখানো হয়েছে ১ টাকা ০৫ পয়সা।
আরডি ফুড: গতবছর বিনিয়োগকারীদের ৩ শতাংশ ক্যাশ এবং ৩ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কিন্তু গেলো এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩৫ টাকা ৪০ পয়সা বা ১৩৭ শতাংশ। এক বছরে আগে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিলো ২৫ টাকা ৮০ পয়সা। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬১ টাকা ২০ পয়সায়।
কোম্পানিটির এমন অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধির পেছনে প্রান্তিক প্রতিবেদনে ইপিএস বেশি দেখানোকে ভিত্তি হিসাবে মনে করলেও, কোম্পানিটির ইপিএস তথ্য সঠিক কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। তারা বলছেন, শেয়ারেরদর বাড়িয়ে কারসাজি করার জন্যই বিনিয়োগকারীদের ইপিএস দেখিয়ে লোকসানে ফেলার চেষ্টা চলছে।
সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিক বা তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ’২২) আরডি ফুড শেয়ার প্রতি আয় দেখিয়েছে ৬০ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিলো ২০ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৪০ পয়সা বা ২০০ শতাংশ।
একইভাবে, তিন প্রান্তিক বা নয় মাসে (জুলাই’২১-মার্চ’২২) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৩৭ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিলো ৫১ পয়সা। আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির ইপিএস বেড়েছে ৮৬ পয়সা বা ১৬৮ শতাংশ। অথচ গত পাঁচ বছরের মধ্যে কোম্পানিটির ইপিএস কখনো ৬৪ পয়সা অতিক্রম করতে পারেনি। এবার ইপিএসে এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কোন কারণও ব্যাখ্যা করেনি কোম্পানিটি।
গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটির ডিভিডন্ড ঘোষণায় দেখা যায়, ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ ক্যাশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। তারপরের দুই বছর ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ বোনাস ও ২০১৯ সালে ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তারপরের বছর ২০২০ সালে ডিভিডেন্ড আরও কমে দাঁড়ায় ২ শতাংশ ক্যাশ ও ২ শতাংশ বোনাসে। সর্বশেষ ২০২১ সালে ৩ শতাংশ ক্যাশ ও ৩ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে কোম্পানিটি।
মুনাফার দিক থেকে দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দুই অঙ্কের ঘরেই আটকে আছে। ২০১৭ সালে ইপিএস হয়েছে ৫৯ পয়সা, ২০১৮ সালে ৩৯ পয়সা, ২০১৯ সালে ৪৬ পয়সা, ২০২০ সালে ৩১ পয়সা এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ৬৪ পয়সা। অথছ চলতি অর্থবছরের তিনি প্রান্তিকেই ইপিএস এসেছে ১ টাকা ৩৭ পয়সা। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে।