নিজস্ব প্রতিবেদক : গুজব ও আতঙ্কে শেয়াবাজারের বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা। বাজারের আরও পতন হবে, এমন আশঙ্কায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। তাদের একযোগে সেল প্রেসার বাড়ানোতে বাজারের অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়ছে। আর এই সুযোগটি নিচ্ছেন বড় বিনিয়োগকারীরা। তারা ধীরালয়ে কম দরে সেসব শেয়ার তুলে নিচ্ছেন, এমনটাই বলছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গুজব ও আতঙ্কে ভয় পেয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে শেয়ার ছাড়ছেন। কিন্তু সেসব কারা কিনছেন। নিশ্চয় বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, কম দরে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার জন্য বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা গুজব ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।
আগেরদিন সোমবার শেয়ারবাজারে ভয়াবহ পতন হয়। তবে দিনের লেনদেন শুরু হয়েছিল আশার আলো ছড়িয়ে। সূচক অনেকটাই বেড়েই শুরু হয়েছিল লেনদেন। কিন্তু গুজব ও আতঙ্কের দাবানলে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি।
বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার প্রেক্ষিতে নানা গুজব ও আতঙ্কের মধ্যে আগেরদিন সোমবার ১৩৪ পয়েন্ট দরপতন হয় দেশের শেয়ারবাজারে। এর মধ্যে খবর প্রকাশ হয় বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ৭০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি আইসিবি। তবে লেনদেন শেষে আইসিবিকে এই ঋণ সমন্বয়ে আরও এক বছর সময় দেয়ার খবরও প্রকাশ হয় বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে।
বিএসইসির এই উদ্যোগের ফলে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হলে সাত মিনিটেই সূচক বেড়ে যায় ৫৪ পয়েন্ট। তারপর শুরু হয় পতন। বেলা ১৩টা ৩৩ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে সূচক কমে যায় ১১২ পয়েন্ট। তখন বাজার নিয়ে গুজব ও আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। পরে সেখান ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত সূচক ২৭ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।
আজ যখন সূচক ১০০ পয়েন্টের বেশি পড়ে যায়, তখন প্রায় সাড়ে ৩৫০ কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়ে ফেলে। শেষ পর্যন্ত ২৪৫টির দর হারিয়ে শেষ হয় লেনদেন। বিপরীতে বাড়ে ৮৯টির। ৪৫টির দর থাকে অপরিবর্তিত।
আগের দিন দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা পাঁচ শতাংশ ছুঁয়ে শতাধিক কোম্পানির লেনদেন শেষ হয়েছিল। আজ সেটি কমে হয়েছে ১৫টির মতো।
আজকের বাজার চিত্র:
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ ২৭.৪২ পয়েন্ট বা ০.৪২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪০৩.৫০ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১.৫২ পয়েন্ট বা ০.১০ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২.২৫ পয়েন্ট বা ০.০৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪০৮.৭৬ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৬৩.৬৬ পয়েন্টে।
ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৭৭৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৪৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল একহাজার ২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার।
ডিএসইতে ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৯টির বা ২৩.৪৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৪৫টির বা ৬৪.৬৪ শতাংশের এবং ৪৫টির বা ১১.৮৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১২১.৩৮ পয়েন্ট বা ০.৬৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৪৫.১৭ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ১৯৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টির দর। আজ সিএসইতে ২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।