নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় বিমা কোম্পানিগুলোকে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ গুণতে হবে বলে মনে করছেন বিমা খাত সংশ্লিষ্টরা। এখন পর্যন্ত খুব অল্প সংখ্যক গ্রাহক বিমার দাবি উত্থাপন করেছে। তবে ৪৫টি বিমা কোম্পানির কাছে বিমা দাবি উত্থাপন হতে পারে বলে মনে করছেন বিমা খাতের সংশ্লিষ্টরা।
গত শনিবার (৪ জুন) রাত নয়টায় অগ্নিকাণ্ডের পর বিস্ফোরণের এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। এতে আহত হয়েছে আরো দুই শতাধিক। এছাড়াও রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত এবং আমদানি করা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদি ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সাধারণ বিমা করপোরেশনের পুনর্বীমা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরাসরি তাদের অগ্নি বিমা পলিসি ইস্যু করা হয়নি। তবে ৪৫টি বেসরকারি বিমা কোম্পানির পুনর্বীমাকারী হিসেবে এই ঘটনার কারণে তাদের কাছে পুনর্বীমা দাবি উত্থাপন হতে পারে। তবে লোকসানের সীমা যদি পূর্ব নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাদের বিদেশী পুনর্বীমা কোম্পানির কাছ থেকে সেটা পূর্ণ করা হবে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতি নিরূপণের পর দ্রুত বিমা দাবি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়েছে বিমা কোম্পানিগুলো। অনলাইন মাধ্যমে এই সংক্রান্ত ঘোষণার পাশাপাশি এরইমধ্যে যেসব গ্রাহকের ক্ষতির সংবাদ এসেছে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে বিমা কোম্পানিগুলো।
প্রসঙ্গত, বিমা হলো নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কোন প্রতিষ্ঠানকে স্থানান্তর করা এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বিমা প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে মক্কেলের আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরনের বিমা করা হয়- জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দু’টি এক্সপোর্ট ইন্স্যুরেন্স পলিসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। ক্ষতিগ্রস্ত পলিসি দু’টির মধ্যে একটির বিমা অঙ্ক ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এই পলিসির আওতায় থাকা সম্পদ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত (টোটাল লস) হয়েছে। অপর পলিসির বিমা অঙ্কের পরিমাণ ৩২ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা (১ ডলার= ৮৯.২৪ টাকা)। এর মধ্যে ১৫ লাখ মার্কিন ডলারের সম্পদ অক্ষত থাকলেও বাকী ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের সম্পদের অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে- বাকী সম্পদের বেশিরভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত দু’টি পলিসির গ্রাহকের সাথে কোম্পানিটির কথা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সম্পদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে ভাবতে হবে না, আইন অনুসারে বিমা বিমা প্রাপ্যদের সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স।
সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে মৌখিকভাবে দু’টি বিমা পলিসির দাবি এসেছে। তবে এসব পলিসির বিমা অঙ্ক বা ক্ষতির পরিমাণ সংক্রান্ত খোন তথ্য এখনও আসেনি। লিখিতভাবেও কোন দাবি উত্থাপন হয়নি। বিমা দাবি সঠিকভাবে আসলে তা কোম্পানির পক্ষ থেকে তা পরিপালন করা হবে।
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির কাছে কোন বিমা দাবি উত্থাপন হয়নি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের কাছে। কোম্পানিটির কাছে যদি কোন বিমা দাবি উত্থাপন হয়, তাহলে দ্রুততার সাথে নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সীতাকুন্ড দুর্ঘটনায় হতাহত গ্রাহকদের বিমা দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে মেটলাইফ বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে কোম্পানিটি বিমা দাবির জন্য অনলাইনে আবেদনের ঠিকানা প্রকাশসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেয়ার জন্য নিকটস্থ কাস্টমার টাচ পয়েন্ট বা সেলস অফিসের তথ্য দিয়েছে।
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বিমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, বিমার নিয়ম অনুসারে ঘটনাস্থল সার্ভে করা হবে। এক্ষেত্রে বিমা কোম্পানির পাশাপাশি পুনর্বীমা কোম্পানিও সার্ভেয়র পাঠাতে পারে। সার্ভেশেষে চূড়ান্তভাবে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ হলে বিমা কোম্পানি গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করবে। এক্ষেত্রে পুনর্বীমা করা থাকলে পুনর্বীমা কোম্পানি তার অংশ পরিশোধ করবে।
শেখ কবির বলেন, আমরা আশা করছি সীতাকুন্ড দর্ঘটনাটি সঠিকভাবে তদন্ত হবে এবং চূড়ান্তভাবে ক্ষতি নিরূপনের পর সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানিগুলো যথাসময়ে তাদের দাবি পরিশোধ করবে।
বিআইএ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, যদি কোন বিমা কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের প্রাপ্য বিমা দাবি পরিশোধ করতে না চায় সেক্ষেত্রে এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তাতেও যদি সমাধান না আসে তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে সংশ্লিষ্ট বিমা গ্রাহক অভিযোগ করলে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে।