নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত বিশেষ নিরীক্ষায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আর্থিক এই অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এসএস শামসুল আরেফিনকে অপসারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসের চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিষ্ঠানটির এমডিকে অপসারণ করে একটি চিঠি প্রেরণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের (ডিএফআইএম) পরিচালক মো. জুলকার নায়েন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসে বিশেষ নিরীক্ষা করার জন্য নিযুক্ত সিএ ফার্ম রহমান রহমান হক (কেপিএমজি) কর্তৃক প্রণীত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটিতে সংঘটিত ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে।
এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থেকে প্রতিষ্ঠান ও আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম শামসুল আরেফিনকে বৃহস্পতিবার এই বিভাগ থেকে জারি করা পত্রের মাধ্যমে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। উত্তরা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যানের কাছে বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন পাঠিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে শামসুল আরেফিন জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ প্রতিবেদনে গত বছর উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসের বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ বের করে নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বাড়ি ও গাড়ি কেনার জন্য অনুমোদন ছাড়াই ঋণ দেয়া হয়েছে।
এছাড়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উত্তরা ফাইন্যান্সের বেশকিছু লেনদেনের নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে অনিয়মের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক উত্তরা ফাইন্যান্সের ২০১৯-২০ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছিল। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
‘এ’ ক্যাটাগরির উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস আর্থিক অনিয়ম ও তদন্তের জেরে গত দুই অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করেনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের মোট ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্স। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ ক্যাশ ও বাকি ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। আলোচ্য অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯ টাকা ৪৮ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৮ টাকা ২৭ পয়সা। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৬২ টাকা ৪৫ পয়সা, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৫৫ টাকা।