নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরের ১১ মাসেই (জুলাই-মে) ৮৪১ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে সরকার। যা বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে এটি রেকর্ড ঋণ। ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থবছর শেষে ঋণের অঙ্ক ৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বিদেশি ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি ও ছাড়ের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৮৪১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের অর্থবছর একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ৫৭২ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ঋণ বেড়েছে ২৬৯ কোটি ডলার। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো অর্থবছরের পুরো সময়েও এত বেশি বিদেশি ঋণ আসেনি।
বৈদেশিক ঋণর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৮১ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ আসে বাংলাদেশে।
এর আগে বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই ভালো অবস্থায় আছে; প্রতিটি সূচক ইতিবাচক। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান মিলিয়ে যা রিজার্ভ আছে, বাংলাদেশের তার দ্বিগুণেরও বেশি আছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পাওয়া গেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে। তারা ১০ মাসে ছাড় করেছে ২০৭ কোটি ৯২ লাখ ডলার।
বৈদেশির ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে এরপরই জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অবস্থান। এই সময়ে সংস্থাটি অর্থছাড় করেছে ১৭৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। চলতি বছরের ১১ মাসে সংস্থাটি ১৫৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড়া করেছে।
এছাড়া রাশিয়া ১১৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার অর্থছাড় করেছে। চায়না ছাড় করেছে ৭৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) ২৯ কোটি ডলার, ভারত ২২ কোটি ডলার এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী ৫৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বৈদেশিক ঋণ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েই বিদেশি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের দেখতে হবে ঋণের পরিচর্চা ব্যয় কতটুকু বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের মোট জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ সহনীয় পর্যায় ধরা হয়। এর বেশি হলেই চিন্তার বিষয় এসে যায়।