নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, আর্থিক, বিমা (সাধারণ বিমা ও জীবন বিমা) এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলো জানুয়ারি-ডিসেম্বর আর্থিক বছর অনুসরণ করে থাকে। খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক ও বিমা খাতের সাধারণ বিমা এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা প্রায় শেষ করেছে। কিন্তু আর্থিক ও বিমা খাতের জীবন বিমা কোম্পানিগুলো এখনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা শেষ করতে পারেনি। এই দুই খাতের কোম্পানিগুলো এখনো ডিভিডেন্ড ঘোষণার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি-ডিসেম্বর অর্থবছরের কোম্পানিগুলোর মধ্যে এযাবত যতগুলো কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, তারমধ্যে পাঁচটি কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের জন্য কেবল বোনাস বা স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ডিভিডেন্ড ঘোষণায় নিয়ম লংঘন করার কারণে কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় পড়তে হয়েছে।
উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য মোট ডিভিডেন্ডের অর্ধেক নগদ বা ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণার বিধান রয়েছে। অন্যথায় কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত করারোপের শাস্তির আওতায় পড়তে হবে। এই বিধানের পরেও ২০২১ সালের ব্যবসায় ৫ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। যাতে করে কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় পড়তে হয়েছে।
কোম্পানিগুলো হচ্ছে- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও রূপালি ব্যাংক লিমিটেড।
২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর পরিপত্র অনুযায়ি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে কমপক্ষে বোনাস ডিভিডেন্ডের সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে হবে। যদি বোনাস ডিভিডেন্ডের পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ডের বেশি হয়, তাহলে পুরো বোনাস ডিভিডেন্ডের উপর ১০ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর দিতে হবে।
এই বিধান সত্ত্বেও ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ অর্থবছরের জন্য এই যাবত ডিভিডেন্ড ঘোষিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৫টি কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের শুধুমাত্র বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানি পাঁচটি শেয়ারহোল্ডারদের ৩৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ১৭ হাজার ৬১০ টাকার বোনাস শেয়ার দিয়েছে।
বিধান অনুযায়ি, শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায় কোম্পানিগুলোকে ৩৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ১৭ হাজার ৬১০ টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে ৩৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ৭৬১ টাকার অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হচ্ছে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে ইউসিবি ব্যাংক লিমিটেড। কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছে। সেই হিসাবে কোম্পানিটি ১২ কোটি ৭৮ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৫টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে।
বোনাস শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। কোম্পানিটি ১০ শতাংশ হারে বোনা শেয়ার করায় সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের অনুকূলে ৮ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৬টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংক আলোচ্য অর্থবছরের জন্য ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে। সেই হিসাবে কোম্পানিটি ৮ কোটি ৫০ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৮টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছে।
সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ওয়ান ব্যাংক ৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। যে কারণে কোম্পানিটি ৪ কোটি ৬৭ লাখ ০২ হাজার ০২৩টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করবে।
সবশেষ রূপালী ব্যাংক ২ শতাংশ বোনাস শেয়ার হিসাবে ৯১ লাখ ১৭ হাজার ০৯৯টি বোনাস শেয়ার ইস্যু করবে।
বিধান অনুযায়ি, শুধুমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করায় কোম্পানিগুলোকে ৩৪৯ কোটি ৯৫ লাখ ১৭ হাজার ৬১০ টাকার উপরে ১০ শতাংশ হারে ৩৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ৭৬১ টাকার অতিরিক্ত কর প্রদান করতে হবে।
এদিকে, বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ি, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিএমআরই (ব্যালেন্সিং, মডার্ণাইজেশন, রিহেবিলিটেশন ও এক্সপানশন), নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালন ও পূণ:বিনিয়োগের জন্য বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারবে। তবে বোনাস শেয়ার ইস্যুর আগে বিএসইসির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।