বিশেষ প্রতিবেদক: শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গেল সপ্তাহে আরও দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অনুমোদন দিয়েছে। ফান্ড দুটির আকার হবে ১২৫ কোটি টাকা। ফান্ড দুটি হলো- এজ্ আল-আমিন শরিয়াহ কনজ্যুমার ফান্ড এবং আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
ফান্ড দুটির মধ্যে আইসিবি এএমসিএল সিএমএসএফ গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আকার হবে ১০০ কোটি টাকা। ফান্ডটির উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএল) দিয়েছে ৫০ কোটি টাকা এবং আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইসিবি এএমসিএল) দিয়েছে ২০ কোটি টাকা। ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) প্রি-আইপিও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রদান করেছে ৫ কোটি টাকা। বাকি ২৫ কোটি টাকা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। ফান্ডটির ইউনিট প্রতি অভিহিত ১০ টাকা।
অন্যদিকে, এজ্ আল-আমিন শরিয়াহ কনজ্যুমার ফান্ডের আকার হবে ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফান্ডটির উদ্যোক্তা ‘এজ্ এএমসি লিমিটেড’ প্রদান করেছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকি ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিওর মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। ফান্ডটির প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্যও ১০ টাকা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে। এরমধ্যে লেনদেনে রয়েছে ৩৫টি। এই ৩৫টির মধ্যে ৩০টি মিউচুয়াল ফান্ডের ইইনিট লেনদেন হচ্ছে ফেস ভ্যালুর নিচে। কোন কোনটির দর প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।
মাত্র ৫টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট ফেস ভ্যালুর উপরে লেনদেন হচ্ছে। যেগুলো হলো-ফার্স্টপ্রাইম মিউচ্যুয়াল ফান্ড, সিএপিএমবিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, সিএপিএমবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, পিএফফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও রিলায়েন্স-১ মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে ৩৫টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০টি ফান্ডই অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে, কোন কোনটির দর অভিহিত মূল্যের অর্ধেক দরে বেচাকেনা হচ্ছে, সেখানে এই দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য যে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাখা হয়েছে, সেই ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার ইউনিট কোন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিনবে? তারা যেখানে ৫-৬ টাকায় পুরনো ফান্ডের ইউনিট কিনতে পারছে, যেগুলোর সম্পদ মূল্য (এনএভি) বাজার মূল্যের দ্বিগুণ-তিনগুণ, সেখানে তারা কেন ১০ টাকা সম্পদ মূল্যের নতুন ইউনিট ১০ টাকা দরে কিনবে?
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে যেসব মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে, সেগুলোর অবস্থা ভালো না করে নতুন করে মিউচ্যুয়াল ফান্ড আনার কোন যৌক্তিকতা নেই। এতে বাজারেরও কোন উপকারে আসবে না; বিনিয়োগকারীদেরও কোন লাভ হবে না। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে আকর্ষণীয় করার ও ভাইব্রেন্ট করার উপায় বের করতে হবে। সেজন্য মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে প্রয়োজনীয় নীতিগত সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, স্থিতিশীল ও নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য বিশ্বব্যাপী মিউচ্যুয়াল ফান্ড অত্যন্ত নির্ভরশীল ইন্সট্রুমেন্ট। বিশ্বের অনেক দেশের শেয়ারবাজারে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আকার মূল বাজারে ৪০ শতাংশের বেশি। সেসব দেশে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীল রাখতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড বড় ভূমিকা পালন করে। তাঁরা বলছেন, ভারতের শেয়ারবাজারেও মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিনিয়োগের জন্য অত্যান্ত আকর্ষণীয়। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো পথে হাঁটছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এখানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কোন কদর নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উন্নয়নে কার্যকরভাবে তেমন কিছু ভাবে না।
এই বিষয়ে কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলে শেয়ারনিউজের প্রতিবেদকরা। তাঁদের কাছে বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, বর্তমান কমিশন মিউচ্যুয়াল ফান্ড বান্ধব কমিশন। এই কমিশন প্রথম থেকেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দিয়ে আসছেন। তারপর মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দুর্দিনেও নতুন করে মিউচ্যুয়াল ফান্ড অনুমোদন দিয়ে চলেছেন। তাঁদের মতে, নিশ্চয়ই অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত কমিশন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অবস্থার পরিবর্তনে বড় কিছু চিন্তা-ভাবনা করছেন। তা না হলে নতুন করে এভাবে বড় আকারের দুটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অনুমোদন দিতেন না। বিনিয়োগকারীদের আলাপ-আলোচনায় দেখা যায়, তারা বর্তমান কমিশনের উপর খুবই আশাবাদী। তাঁদের বিশ্বাস বর্তমান কমিশন মিউচ্যুয়াল ফান্ড উন্নয়নে অবশ্যই কিছু একটা করবে।