ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪
Sharenews24

বানকো সিকিউরিটিজের পরিচালকদের ৭ কোটি টাকা জরিমানা

২০২৩ আগস্ট ১০ ১২:৪১:৩১
বানকো সিকিউরিটিজের পরিচালকদের ৭ কোটি টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ব্রোকারেজ হাউজ বানকো সিকিউরিটিজের সাতজন পরিচালককে ৭ কোটি টাকা জরিমান করা হয়েছে।

দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন—বানকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত, এমডি সামিউল ইসলাম, পরিচালক মো. শফিউল আজম, ওয়ালিউল হাসান চৌধুরী, নুরুল ঈশান সাদাত, এ মুনিম চৌধুরী ও জামিল আহমেদ চৌধুরী। তাঁদের প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা করে মোট ৭ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা ও সিকিউরিটিজ বিধিবিধান লঙ্ঘন করার অভিযোগে সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বানকো সিকিউরিটিজের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নগদ ৬৬ কোটি ৬০ লাখ ও শেয়ার বিক্রি করে আরও ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। নগদ টাকা ও শেয়ার বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা প্রায় ১২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগটি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। তবে ব্রোকারেজ হাউসটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রত্যেক পরিচালককে ১ কোটি করে মোট ৭ কোটি টাকা অর্থদণ্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রত্যেক পরিচালককে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। এছাড়া আদালতে চলমান মামলার অগ্রগতি জানতে দুদকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বানকো সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। এই জরিমানা সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনজনিত। তাঁদের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আমরা দুদকে দিয়েছি। দুদক অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে পারে, আমরা পারি না। সেটা চলমান রয়েছে।’

এর আগে ২০২১ সালে রাজধানীর মতিঝিল থানায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ও শেয়ার আত্মসাতের ঘটনায় বানকো সিকিউরিটিজ ও এর সাত পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে ডিএসই। প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৪০৬ ও ৪০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পরে মতিঝিল থানা অভিযোগটি দুদকে প্রেরণ করে।

ডিএসইর অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ৬ মে ও ৬ জুন বানকো সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তী গত ৭ জুন কোম্পানিটিতে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে ডিএসই। ওই সময় ব্রোকারেজ হাউসটির সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্টে গত ৬ জুনের হিসাবে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকার ঘাটতি পায় ডিএসই। ফলে তাৎক্ষণিক ডিএসই কোম্পানির কাছ থেকে ওই সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্টের ঘাটতির ‘গ্রাহকের পরিশোধযোগ্য সমন্বয়সাধন বিবরণ’ গ্রহণ করে।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, বানকো সিকিউরিটিজ ও তাদের মালিকপক্ষ বিনিয়োগকারীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ও শেয়ার আত্মসাৎ করেছে। আর এ অর্থ সমন্বয় না করেই তাদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোম্পানিটির এমন কর্মকাণ্ড পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীকে তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত করে তুলেছে। বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ভঙ্গ করে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে বানকো সিকিউরিটিজের পরিচালক ও কর্মকর্তা/কর্মচারীরা অপরাধ করেছেন।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পলাতক বানকো সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল মুহিতকে ২৯ জুলাই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করে। পরে ৩০ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আতিকুল আলম আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিএসইর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ জুলাই বানকো সিকিউরিটিজের পরিচালকদের সংশ্লিষ্ট ১০ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে সেগুলো হলো—বানকো সিকিউরিটিজ, বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, সুব্রা সিস্টেমস, সুব্রা ফ্যাশনস, বানকো পাওয়ার, বানকো এনার্জি জেনারেশন, বানকো স্মার্ট সল্যুশন, ক্লাসিক ফুড ল্যাব, অ্যামুলেট ফার্মাসিউটিক্যালস ও সামিট প্রপার্টিজ লিমিটেড।

অর্থ আত্মসাতের ঘটনার পর থেকে দুই বছর অতিবাহিত হলেও বানকো সিকিউরিটিজের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে লিংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি থেকে অন্য ব্রোকারেজ হাউজে শেয়ার স্থানান্তর করে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে যেসব বিনিয়োগকারীদের নগদ টাকা এবং শেয়ার বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে তাঁরা এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

শেয়ারনিউজ, ১০ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে