কক্সবাজারে প্রান্তিক পর্যায়ে লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫ টাকায়, যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছিল ৫ টাকায়। এদিকে, ঢাকায় খাবার যোগ্য লবণ প্রতি কেজি বিক্রয় হচ্ছে ৪৫ টাকা। কোরবানির ঈদে চামড়াজাত পণ্যে ব্যবহারের জন্য এর চাহিদা বেড়েছে।
জানা যায়, এক মাস আগে মাঠপর্যায়ে কালো লবণ বিক্রি হয়েছিল প্রতি মণ ১০০ টাকা। ওই সময় একই পরিমাণ মাঠওয়াশ লবণ ১৩০-১৫০ ও পলিথিন পদ্ধতির লবণ ১৮০-২০০ টাকায় লেনদেন হয়েছিল।
তবে বর্তমানে প্রতি মণ কালো লবণ ৪০০, মাঠওয়াশ ৫০০-৫৫০ ও পলিথিন পদ্ধতির লবণ ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কক্সবাজার অফিসের তথ্যমতে, বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল লবণ উৎপাদনের মৌসুম। গেল মৌসুমে কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়াসহ সাত উপজেলার উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৬০ হাজার একর এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৭ হাজার ২৫৬ একর জমিতে লবণ উৎপাদন করা হয়।
গত মৌসুমে সরকারিভাবে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ লাখ টন। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম অর্থাৎ ১৫ লাখ ৫৫ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়। পণ্যটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সরকার দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয় মিল মালিকদের।
মহেশখালী প্রান্তিক লবণচাষী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ছৈয়দুল কাদের বলেন, গেল উৎপাদন মৌসুমের শেষ দিকে প্রকৃতিক বৈরী আচরণ দেখা দিলেও সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি লবণ উৎপাদন হয়।
তবে বড় চাষীরা তাদের উৎপাদিত লবণ তখন মিল মালিকদের কাছে বিক্রি না করে মাঠে এবং গোডাউনে মজুদ করে রেখেছিলেন কম দামের কারণে। কয়েক দিন ধরে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরা সেই মজুদকৃত লবণ এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন মিল মালিকদের কাছে।
চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের শ্রমিক নেতা ছমি উদ্দিন, বদরখালীর আকতার আহমদ বলেন, এখন লবণ বিক্রি করছি প্রতি মণ সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায়, যা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সরকার উৎপাদন মৌসুমে লবণ আমদানি বন্ধ রাখতে উদ্যোগ নেয়ায় এর সুফল পাচ্ছেন চাষীরা।
জানা গেছে, চলতি বছরের লবণ উৎপাদন মৌসুমে এপ্রিলে কক্সবাজারে কালবৈশাখীর কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় উৎপাদন। পুরোদমে লবণ উৎপাদনের শেষ দিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাষীরা লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করেন। তবে শেষ মুহূর্তে স্বাভাবিক আবহাওয়ার পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত রোদে লবণ উৎপাদনের ধুম পড়ে যায় মাঠে মাঠে।
প্রখর রোদেও চাষী ও শ্রমিকরা লবণ মাঠে ব্যস্ত সময় কাটান। চাষীরা জানান,দেশে এর আগে লবণের বাম্পার উৎপাদন হলেও মৌসুম চলাকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে মিল মালিক সিন্ডিকেটদের আঁতাতে প্রতি বছর লবণ আমদানি করায় এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া শুরু করেন চাষীরা।
লবণকে লোকসানি পণ্য হিসেবে ধরে নিয়ে অনেকে এর চাষ থেকে বিরতও রয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে সরকারের লবণনীতি অনুযায়ী দাম যেহেতু বাড়তির পথে, সেহেতু এ শিল্প আবারো আলোর মুখ দেখবে।
আমদানি প্রসঙ্গে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, এখন যেহেতু লবণ উৎপাদন মৌসুম নয়, সেহেতু চাহিদা অনুযায়ী শিল্প খাতে ব্যবহারের জন্য দেড় লাখ টন লবণ আমদানি করলে বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আফসার উদ্দিন বলেন, সামনের কোরবানির ঈদের চামড়াজাত পণ্যে ব্যবহারের জন্য এটির বিপুল চাহিদা রয়েছে। তাই দেশে উৎপাদিত লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষীরাও খুশি। বর্ষার সময় উৎপাদন না হলেও আগে মজুদকৃত লবণ দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন মাঠপর্যায়ের চাষীরা।