নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে রাজি হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সঙ্গে একের পর এক সুখবর দিচ্ছে কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়া জানিয়েছে তাদের স্পুটনিক ফাইভ টিকা ৯৫ শতাংশ কার্যকর।
এই বড় দুই সুখবরে কমতে শুরু করেছে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বছর ধরে চলমান উত্তেজনা ও উদ্বেগ। ৩০ হাজার পয়েন্টের রেকর্ড ছুঁয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার ওয়াল স্ট্রিটের ডাও জোন্স সূচক। প্রায় ১২৫ বছরের ইতিহাসে এটিই ডাও জোনসের সর্বোচ্চ অবস্থান।
ডাও জোন্স সূচকের যাত্রা ১৮৯৬ সালে। মার্কিন অর্থনীতির প্রধান সূচক ধরা হয় এটিকে। ১৯৩০ সালের মহামন্দার সূচনা হয় এই সূচক পতনের মধ্য দিয়েই।
ডাও জোন্স সূচক প্রথম ১০ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করে ১৯৯৯ সালের ২৯ মার্চ। এক মাসেই সূচকটি আরো ১ হাজার পয়েন্ট বেড়ে যায়। ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সূচকটি ২০ হাজার পয়েন্টে উঠে যায়। এক বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি ২৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করে। তবে এরপর থেকেই চলছে ব্যাপক চড়াই উতরাই।
২০১৮ সালের শেষে ডাও জোন্স ও আরেক সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ দুটোই বেশ কমে যায়। ২০১৯ সালে এসে আবার উত্থান দেখা যায়। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের হানায় ২০২০ সাল বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে ঝড় বইয়ে দিয়েছে। বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডাও জোন্সের ব্যাপক পতন লক্ষ্য করা গেছে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সাড়ে ৪০০ পয়েন্ট বেড়ে ৩০ হাজার পয়েন্টের রেকর্ড ছুঁলো।
গতকাল ওয়াল স্ট্রিটের বাকি দুটি সূচকও বেড়েছে। এর মধ্যে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ বেড়েছে ১.৬২ শতাংশ এবং নাসডাক বেড়েছে ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
ডাও জোন্স সূচকের বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ার দর বৃদ্ধি। মূলত করোনাকালজুড়েই টেসলার দর বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে বাড়ছে মাস্কের সম্পদের পরিমাণও। গতকাল বিশ্বের ধনীদের তালিকায় বিল গেটসকে হটিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে গেছেন তিনি।
এশিয়ার পুঁজিবাজারেও গতকাল রেকর্ড গড়েছে জাপানের নিক্কেই। লেনদেন শুরুর দিকেই ২৯ বছরের মধ্যে সূচকের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চেলের এমএসসিআই সূচক দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। ঋণ খেলাপি বেড়ে যাওয়ার উদ্বেগের কারণে চীনা কোম্পানিগুলোর শেয়ারে পতলের ফলে এমএসসিআই সূচকে এই পতন।
এদিকে আজ বুধবার এশিয়ার পুঁজিবাজারে কিছুটা মিশ্র প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। বেড়েছে জাপানের নিকেই, হংকংয়ের হ্যাংসেং ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সূচক। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি ও চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক কিছুটা কমেছে।
মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান বায়োএনটেক এবং মডার্নার পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজেনেকা জুটির টিকার কার্যকারিতা নিয়ে আশাব্যঞ্জক ফলাফল জানা গেছে। সবগুলোর কার্যকারিতা ৯০ শতাংশের উপর বলে দাবি করা হয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা জানিয়েছে, ব্রিটেন ও ব্রাজিলের ট্রায়ালে করোনা প্রতিরোধে গড়ে ৭০ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে তাদের ভ্যাকসিন। গতকাল রাশিয়ার স্পুটনিক ফাইভের কার্যকারিতা ৯৫ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে। আর এসব খবরে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে। সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স