নিজস্ব প্রতিবেদক: জনপ্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধী যে দলের হোক বা যে কেউ হোন না কেন, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। সেটাই আপনারা করবেন, আমরা চাই। গতকাল ১১৬, ১১৭ ও ১১৮তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী এবং সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলব। আর সেটার জন্য কিন্তু আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। হঠাৎ করেই কতগুলো সমস্যা দেখা দিয়েছে—ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি। এগুলোর বিরুদ্ধে আপনাদের আরো যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেখানে কারো মুখ চিনে নয়, অপরাধী যে-ই হোক তাকে অপরাধী হিসেবেই দেখবেন।
সরকার বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দক্ষ সরকারি কর্মচারী গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটাকে উন্নত করার জন্য আমরা উপযুক্ত কর্মচারী গড়ে তুলতে চাই, মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়। প্রশাসনের সেবা পায়। নিজেদের ভাগ্য নিজেরা গড়ার সুযোগ পায়।
প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে সরকারপ্রধান বলেন, কোনো মানুষকে অবহেলার চোখে দেখবেন না বা তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করবেন না। মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান দিতে হবে। জাতির পিতা বলেছিলেন, আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় এ গরিব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ওই গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’
তিনি বলেন, প্রত্যেকেরই অবদান রয়েছে এ সমাজের প্রতি। প্রত্যেকের অবদান রয়েছে দেশের প্রতি। সে কথাটা মনে রাখতে হবে। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের সেবা করা।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে সেই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে যাচ্ছেন, আপনারাই কিন্তু তখন একটা উচ্চপর্যায়ে যাবেন বা ২০৪১-এর কর্ণধার আপনারাই হবেন। বাস্তবায়ন আপনারাই করবেন। কাজেই সেভাবে নিজেদের গড়ে তুলবেন। যে কোনো একটা জাতির জন্য সবসময় একটা দিকনির্দেশনা থাকা দরকার হয়, দিকদর্শন থাকতে হয়, লক্ষ্য থাকতে হয়। একটা লক্ষ্য স্থির না থাকলে কখনো কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। সেই লক্ষ্যটা ঠিকভাবে অর্জনের জন্যই কিন্তু আমরা এ পরিকল্পনা নিয়েছি। এটা একটা কাঠামো।
আগামী দিনে দেশকে এগিয়ে নিতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর যারাই আসবেন দায়িত্বে, তারা যেন অন্তত তখনকার যুগের প্রয়োজন মিটিয়ে সেগুলো কাজে লাগাতে পারেন; একটা লক্ষ্য যদি স্থির থাকে, তাহলে প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব এখন; প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানের যুগ; এখানে গবেষণা এবং বিজ্ঞানের প্রভাব তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেভাবে পরিকল্পনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সেটা আপনাদের করতে হবে। সেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করবেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণে সরকারের সব পর্যায়ে এরই মধ্যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, রাখা ও এর প্রয়োগ করার পর কী কী করতে হবে, সে বিষয়ে সবরকমের নির্দেশনা আমার দেয়া আছে। সেটা মেনেই আমাদের এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে হবে। করোনার মধ্যেও সরকার গৃহীত প্রকল্পগুলো যেমন নিয়ম মতো ও মানসম্পন্ন হয়, তা লক্ষ্য রাখতে তিনি সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রশিক্ষণার্থীদের পক্ষ থেকে তিনজন অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অংশগ্রহণকারী মোট ১১৬ জন প্রশিক্ষণার্থীর সবাই সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনজন প্রশিক্ষণার্থী রেক্টর অ্যাওয়ার্ডস লাভ করেন। তারা হলেন জিসান বিন মাজেদ, হাফিজুল হক ও তারিকুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন রেক্টর অ্যাওয়ার্ডস তুলে দেন।
বিসিএস প্রশাসন একাডেমি প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর বদরুন নেছা। গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।