নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ার মার্কেট বা শেয়ারবাজার এমন একটি জায়গা যেখানে একই রকম দক্ষতা নিয়ে সারাজীবন ব্যবসা করা যায় না। কখনত্ত কখনত্ত এমন পরিস্থিতি চলে আসে, শেয়ার মার্কেটের অনেক বড় বিশেষজ্ঞও ভালো পারফরমেন্স করতে পারেন না।
একজন বিনিয়োগকারীর মধ্যে যদি কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে তবে যেই পরিস্থিতি আসুক না কেন তিনি তা মানিয়ে নিতে পারেন।
আসুন শেয়ারবাজারে সফল হওয়ার জন্য একজন বিনিয়োগকারীর মধ্যে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত, তা জানার চেষ্টা করি।
১। কারণ খোঁজা : বিনিয়োগণীতি সবার জন্য সমান নয়। একজন ছাত্র এবং একজন কর্মজীবীর বিনিয়োগনীতি যেমন আলাদা, ঠিক তেমনি একজন গৃহিণী এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত মানুষের বিনিয়োগনীতিও আলাদা।
একজন সফল বিনিয়োগকারী জানে সে কেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চায় এবং এখান থেকে কি অর্জন করতে চায়।
আপনি যখন একটি শেয়ারে টাকা বিনিয়োগ করবেন, এর পিছনে যথেষ্ট কারণ থাকতে হবে।
আবেগে না পড়ে কারণ খুঁজে বিনিয়োগ করাই একজন যোগ্য বিনিয়োগকারী বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
২। শৃঙ্খলাবদ্ধ বিনিয়োগ : শৃঙ্খলা শুধুমাত্র শেয়ারবাজারের জন্যই নয়; সব কাজের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। মাঝে মধ্যে নয়, নিয়মিতভাবে বিনিয়োগ করার ফলে একজন বিনিয়োগকারি হঠাৎ শেয়ারবাজারে যে অস্থিরতা হয়, এর থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে।
৩। লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারা : যার পরিকল্পনায় ভুল থাকে তার যাত্রাও ব্যর্থ হয়। একজন সফল বিনিয়োগকারী সব সময় একটি লক্ষ্য ঠিক করে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করে।
কত দিনে কত পারসেন্ট প্রফিট আশা করে এর একটি সম্ভাব্য টার্গেট করেই বিনিয়োগ করে।
টার্গেট প্রাইজ পাওয়ার সাথে সাথে সেই শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া উচিত। কেননা এতে ভুল সিদ্ধান্ত এড়ানো যায়।
৪। ধৈর্যধারণ করতে পারা : একজন বিনিয়োগকারীর অন্যতম সেরা গুণ ধৈর্য ধারণ করতে পারা।
ধৈর্যের ফল সব সময় মিষ্টি তা জানা সত্ত্বেও অনেক বিনিয়োগকারী তা না মেনে শেয়ার লেনদেন করে।
ফলস্বরূপ নিজেকে হতাশগ্রস্থ দলের সভাপতি মনে করে। টাকার সাথে সময় এবং ধৈর্য বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই।
কথিত আছে, একবার একজন লোক warren Buffett কে জিজ্ঞাসা করেছিল আপনার বিনিয়োগনীতি তো অনেক সহজ, তাহলে কেন সবাই আপনার নীতি অনুসরন করে না? এর উত্তরে warren Buffett বলেছিলেন, সবাই আমার মত ধীরে এবং সময় নিয়ে ধনী হতে চায় না।
৫। জানার আগ্রহ : একজন বিনিয়োগকারী নিদিষ্ট কোন কোম্পানিকে ভালোবাসে না, সে সামগ্রীক বাজারকে ভালোবাসে।
শেয়ারবাজারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন খবর আসে, কোনো না কোনো খবরের কারণে শেয়ারের দাম উঠা নামা করে। তাই আপনাকে অবশ্যই বেসিক শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে কোম্পানির প্রোফাইল পড়ার মন মানসিকতা থাকতে হবে।
৬। সব সময় লাভ হবে না তা মেনে নেওয়া : আপনি যদি ঝুঁকি নিতে না চান তবে আপনার কখনই শেয়ারবাজারে আসা উচিত নয়।
একজন সফল বিনিয়োগকারী জানে সব সময় শেয়ারবাজার থেকে লাভ করা যায় না।
ধরুন, আপনি যে কোম্পানির শেয়ার কিনলেন তারা ভালো ব্যবসা করছে, বিগত দিনে ভালো ডেভিডেন্ট দিয়েছে, সকল নিউজ ঐ কোম্পানির পক্ষে আছে ইত্যাদি দেখেই বিনিয়োগ করেছেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, দেখলেন আজকে ঐ কোম্পানির ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে গেছে, তাহলে এই অবস্থায় আপনাকে কিছু টাকা লস দিয়ে ঐ শেয়ার থেকে বের হয়ে যেতে হবে। তাই শতভাগ মূলধন নিশ্চয়তা নিয়ে আপনি এ ব্যবসায় আসতে পারবেন না।
২/৩ মাসেও তেমন বাড়ছে না কিংবা কমছেও না, আর অন্যদিকে যে কোন একটি সেক্টরের শেয়ার দিন দিন অনেক বেড়েই চলছে।
এই অবস্থায় আপনার মধ্যে হতাশা কাজ করতে পারে এবং আপনি লোভে পড়ে যেই সেক্টর অতিমূল্যায়িত সেই সেক্টরে চলে গেলেন, এর পরে ঘটলো অন্য ঘটনা।
নতুন আসা সেক্টরে শেয়ারের দাম পতন শুরু হলো এবং আপনার আগে হোল্ড করা শেয়ারগুলোর দাম বেড়ে গেল।
যার ফলে আপনি কিন্তু উভয় দিক হারাবেন। তাই এই লোভ থেকে যতটা সম্ভব আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে।
৮। ঝুঁকি জানা : একজন সফল বিনিয়োগকারী জানে যে, তলা ফুটা নৌকা দিয়ে ছোট খাল পাড়ি দেওয়া যায়। তবে কোন দিনই সাগর পাড়ি দেওয়া যায় না।
আপনি যেই শেয়ার যত দামে কিনতে চাচ্ছেন বা কিনছেন সেই কোম্পানি সেই দাম পাওয়ার যোগ্য কিনা তা দেখতে হবে।
শেয়ারবাজারে ঝুঁকি আছে, তবে ঝুঁকি মানে এই নয় যে ২ টাকা লাভ করার জন্য ১০ টাকার ঝুঁকি নিবেন।
আপনি যেই শেয়ার থেকে ২ টাকা লাভ করতে চান, সেখানে সর্বোচ্চ ৪ টাকা ঝুঁকি নেওয়া যেতে পারে। তাই একজন সফল বিনিয়োগকারী হতে চাইলে এই সকল গুনাবলী আমাদের মধ্যে থাকা চাই।