নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি পোশাকের মতো চামড়া ও চামড়াজাত রপ্তানির পালেও হাওয়া লেগেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংকটে ছিল এখাতের রপ্তানি। করোনাভাইরাস মহামারিতে সেটায় ধস নেমেছিল। তবে এবার মেঘ কাটতে শুরু করেছে। আবারও সুদিনের আলো দেখছে খাতটি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৮ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ২১২ কোটি টাকা, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
আর এই আয়ের ৬২ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকাই এসেছে জুতা রপ্তানি থেকে।
গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই খাত থেকে ২৮ কোটি ৩২ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
রপ্তানিকারকরা আশার কথা শুনিয়ে বলছেন, তৈরি পোশাকের মতো চামড়া খাতেও প্রচুর অর্ডার আসছে। আগামী দিনগুলোতেও রপ্তানির বর্তমান ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রধান বাজার হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। এই ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয় এই পণ্য।
মহামারি করোনার কারণে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এই দেশগুলো। ছোট-বড় সব ধরনের শপিং মল খুলেছে। মানুষজন এখন পুরোদমে কেনাকাটা করছে। অর্থনীতি আবার গতি ফিরে এসেছে। অন্যান্য পণ্যের মতো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। সে কারণেই রপ্তানি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন রপ্তানিকারকরা।
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে জুতার মোট বাজারের ৫৫ শতাংশ চীনের দখলে। ভারত ও ভিয়েতনামেরও ভালো অবস্থান আছে। বিশ্বে জুতার বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম।
করোনার পর তৈরি পোশাকের মতো চামড়া খাতের রপ্তানিতেও নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীনের কিছু অর্ডার বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। ভিয়েতনাম থেকেও অর্ডার আসছে। এসব সুযোগ ভালোমতো কাজে লাগাতে পারলে ভবিষ্যতে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।
প্রতিবছর চামড়া খাত থেকে যে বিদেশি মুদ্রা দেশে আসে, তার প্রায় ১৫ শতাংশ রপ্তানি করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। এর পরেই রয়েছে ফরচুন গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির অবদানও প্রায় ৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠান দুটি জার্মানি, ইতালিসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশে জুতা রপ্তানি করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাতেও জুতা রপ্তানি শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েক বছর ধরে চামড়া খাতের রপ্তানিতে বেশ খারাপ অবস্থা চলছিল। গত বছর করোনার ধাক্কায় তা আরও নাজুক হয়। তবে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ভালোই যাবে আগামী দিনগুলো।
তিনি বলেন, ‘জুতাসহ চামড়াজাত সব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। দুই বছর ধরে যারা কোনো জুতা বা চামড়ার পণ্য কেনেনি, তারা এখন কিনছে। সে কারণেই রপ্তানি বাড়ছে।’
আগামী দিনগুলোতে এই খাতের রপ্তানি আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করে নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘সব দেশের সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতে অবস্থিত বড় বড় ব্র্যান্ডের দোকানগুলো খুলেছে; লোকজনের যাতায়াত বেড়েছে। বিক্রিও বাড়ছে।’
নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘ভ্রমণের সময় লোকজন চামড়ার তৈরি নানা ধরনের ল্যাগেজ ব্যবহার করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সেগুলোরও চাহিদা বেড়েছে।
‘সবকিছু মিলিয়ে চামড়া খাতে আমরা আশার আলো দেখছি। আশা করছি, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরেই আমরা এই খাত থেকে আগের মতো বিদেশি মুদ্রা আয় করতে পারব।’
এই বিষয়ে ফরচুন সুজ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব রিয়াজ উদ্দিন শেয়ারনিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের জুতার অংশগ্রহণ মাত্র ১ শতাংশ। এই বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন ও ভিয়েতনাম। এই বাজারে বাংলাদেশের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহন ৫ শতাংশে উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও খানিকটা বেড়েছে। সে কারণেই রপ্তানি আয় বেশি আসছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। অনেক দিন পর চামড়া খাতের রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এই সুযোগটিই আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আর যদি সেটা আমরা করতে পারি, তাহলে আমরা এই খাতকে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারব।’