নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে বড় বস্ত্র খাত। এই খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে আজ লেনদেন বেড়েছে সবগুলো কোম্পানির। আর শেয়ারদর বেড়েছে ৪১টি কোম্পানির। হঠাৎ এই খাতের এমন উত্থানের পেছনে কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দাম বৃদ্ধি বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, বস্ত্র খাতে যে সব কোম্পানি সুতা ও তুলা রপ্তানি করে এমন কোম্পানিগুলোর জন্য সুদিন হলেও হুমকির মুখে পড়তে পারে সুতা ও তুলা আমদানী করা কোম্পানিগুলো। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তুলা ও সুতার আমদানী করে কোম্পানিগুলো অর্ডার ডেলিভারি দিতে হবে। এতে করে আগের অর্ডারগুলো ডেলিভারি দিতে কোম্পানিগুলোকে গুণতে হবে হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ। এতে করে অনেক বেশি লোকসানে পড়তে পারে তুলা ও সুতা আমদানী করে পণ্য রপ্তানী করা বস্ত্র কোম্পানিগুলো।
আজ বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বস্ত্র খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। সু খবর রয়েছে শুধুমাত্র তুলা ও সুতা রপ্তানী করা কোম্পানিগুলোর জন্য। কিন্তু হুজুগে পড়ে অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারেও বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকতে দেখা গেছে। যা বিনিয়োগকারীদের ভুগতে হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি দেশের শিল্পাঞ্চলে চলছে চরম গ্যাস সংকট। গ্যাস সংকটের কারণে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ব্যয় হঠাৎ বেড়ে গেছে। এছাড়া, সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দর বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে এমনিতে বস্ত্র পণ্যের দর বাড়াতে হবে। অর্থাৎ তুলা ও সুতার দর বাড়ানোর খবর কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধির খবর নয়।
এদিকে বাংলাদেশ টেক্সটাইলস মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) থেকে বলা হচ্ছে, আগামী মার্চ-এপ্রিলে বস্ত্র খাতে ‘মহাসংকট’-এর আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা মোকাবেলার জন্য সুতার দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে সংস্থাটি।
বিটিএমএ এর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বর্তমানে তুলা প্রাপ্তি নিয়ে মিলগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে। এলসি খোলার পর কয়েক মাস পার হলেও তুলা আসে না। যে পরিমাণ এলসি খোলা হয়েছে তার চাইতে অনেক কম শিপমেন্ট হচ্ছে। এর কারণ তুলার অভাব, কনটেইনার সংকট, জাহাজের সংকট ও জাহাজের ভাড়া। পণ্য খালাসে বিলম্ব হওয়ায় বর্তমানে পণ্যবোঝাই আন্তর্জাতিক জাহাজ বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে আসতে চায় না। যেগুলো আসছে সেগুলোও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। একইভাবে স্থানীয় ফিডার জাহাজের স্বল্পতা থাকায় শিপিং লাইনগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে। ফলে তুলার আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সাপ্লাই চেনে বিঘ্ন ঘটছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত আফ্রিকা, ভারত, ইউএসএ, সিআইএসভুক্ত দেশ, অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে তুলা আমদানি করা হয়। গুণগত মানে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও করোনার সময় লিড টাইমকে প্রাধান্য দিয়ে ভারত থেকে তুলা আমদানি করতে হয়েছে। কিন্তু বিদেশি তুলা রপ্তানিকারকরা এখন বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রতি পাউন্ড তুলার দাম ২-৩ সেন্ট বেশি চাচ্ছে। মূলত আন্তর্জাতিকভাবে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধিই এ জন্য দায়ী। এছাড়া প্রতি পাউন্ডে অনকলে ফিক্সেশন ২-৩ সেন্ট বেশি থাকে। সব মিলিয়ে এক পাউন্ড তুলার দাম ৪-৬ সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ওপর সুতা রপ্তানিকারক দেশ থেকে ফ্যাক্টরি পর্যন্ত পৌঁছতে ৬-৮ মাস সময় লাগে। এ সময় ঋণের সুদসহ অন্য খরচ গুনতে হচ্ছে। এমনকি ট্রাক ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের তুলা রপ্তানিকারকরাও এফওবি (ফ্রেইট অন বোর্ড) মূল্যে তুলা বিক্রি করতে চাচ্ছে।
৮০০ ডলারের ট্রাকভাড়া ক্ষেত্রবিশেষে ২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই অবস্থায় স্পিনিং মিলগুলো মহাসংকটে আছে।
ভবিষ্যৎ কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তৈরি পোশাক শিল্পে টেক্সটাইল শিল্পের অবদান তুলে ধরে বিটিএমএ সভাপতি খোকন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার মূল্য বৃদ্ধির কারণে কখনো কখনো প্রতিযোগিমূলক মূল্যে গার্মেন্ট শিল্প সুতা প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কিন্তু ২০১০-১১ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং চলমান করোনা পরিস্থিতিতে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সেপ্টেম্বরে তুলার দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে বিটিএমএ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুতার দামবেঁধে দিয়েছিল। এতে তৈরি পোশাক খাত উপকৃত হয়েছে বলে মনে করি।
এতে করে তুলা ও সুতা রপ্তানীকারী কোম্পানিগুলোর মুনাফা বাড়লেও পণ্যের দার বৃদ্ধির কারণে আমদানীকারী কোম্পানিগুলো লোকসানে পড়তে পারে। যা বস্ত্র খাতের জন্য খুবই সংকটময় সময়।
আজ শেয়ারবাজারে বস্ত্র খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার দর কমেছে ১৫ টি কোম্পানির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৯ টি কোম্পানির শেয়ার দর।
আজ এই খাতে মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার। যা মোট লেনদেনের সাড়ে ১২ শতাংশ। আজ ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭১২ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।