নিজস্ব প্রতিবেদক : সাম্প্রতিককালে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারে চলছে অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের লুকোচুরি খেলা। কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে এখন চলছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে চড়ানো মহড়া। এরমধ্যে ৬ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে আজ বিনিয়োগকারীরা আলোচনায় মেতেছেন। কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ফারইস্ট লাইফ, ফরচুন সুজ, লাভেলো আইসক্রীম, অরিয়ন ইউনফিউশন এবং প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন চলছে। যে কারণে কোম্পানিগুলোর শেয়ার অস্থির আচরণ করছে। কয়েকটি কোম্পানি প্রায় প্রতিদিনই হয় বিক্রেতা সঙ্কটে পড়ে ডানে হল্টেড হচ্ছে; নয়তো ক্রেতা সংকটে পড়ে বামে হল্টেড হচ্ছে। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর সকালে বড় পতন হলে বিকালেই বড় উত্থান হচ্ছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর প্রায় আকাশচুম্বী হয়েছে। যে কারণে চড়া দরে কারসাজিকারিরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টানতে পারছে না। নিজেরা নিজেরাই লেনদেন করে বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। যে কারণে চলছে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন, টানাটানি। পাশাপাশি চলছে পাবলিক মার্কেটে ও ব্লক মার্কেট অস্বাভাবিক লেনদেনের লোক দেখানো মহড়া। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ কোম্পানির লোকজন ভিতর থেকেই শেয়ারগুলোর দর বাড়াচ্ছে।
আজ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। এদিন কোম্পানটির দর আগের দিনের তুলনায় ৯ টাকা ৯০ পয়সা বা ৯.৪৭ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১১৪ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়, যা গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আজ এই শেয়ারের দর প্রথমে ১১১ টাকায় তুলে ১০৫ টাকায় নামানো হয়। তারপর ফের ঊর্ধ্বমুখী করে ১১৪ টাকা ৯০ পয়সায় ওঠানো হয়। গত ২ বছরের মধ্যে শেয়ারটির সর্বনিম্ন দর ছিল ৩৫ টাকা ৬০ পয়সা। এই কোম্পানির দর গত ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে ৬দিনই বিক্রেতা সংকটে পড়ে হল্টেড ছিল। গত ১৪ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৯৪ টাকা ৩০ পয়সা বা ১৮৮.২২ শতাংশ।
অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে-
ফরচুন সুজ : একের পর এক রেকর্ড গড়ে টানা বেড়েই চলেছে এই কোম্পানির শেয়ারদর। গত ১৩ কার্যদিবসের মধ্যে মাত্র ৪দিন কমলেও বেড়েছে ৯ দিন। ১৩ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৪০ টাকা বা ৪৪.৩৯ শতাংশ। আজ কোম্পানটির দর আগের দিনের তুলনায় ৮০ পয়সা বা ০.৬২ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১৩০ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়, যা গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন এই শেয়ারের দর ১২৭ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১৩১ টাকা ১০ পয়সায় ওঠানামা করে। গত ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দর ছিল ১৩ টাকা ৪০ পয়সা। বর্তমানে কোম্পানিটির পিই রেশিও ২৫.২১ পয়েন্ট।
প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল : গতকাল ১৭ জানুয়ারি কোম্পানটির দর আগের দিনের তুলনায় ৩ টাকা ৮০ পয়সা বা ৩.৭১ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১০৬ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়, যা গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন এই শেয়ারের দর ১০৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১০৮ টাকায় ওঠানামা করে। গত ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দর ছিল ৪০ টাকা ৯০ পয়সা। কিন্তু আজ এই কোম্পানির শেয়ার দর ৪ টাকা ১১ পয়সা বা ৩.৮২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০৩ টাকা ১০ পয়সায়। এদিন কোম্পানিটির দর ১০২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১০৮ টাকা ৬০ পয়সায় ওঠানামা করে। বর্তমানে কোম্পানিটির পিই রেশিও অবস্থান করছে ১৬.৮৫ পয়েন্ট। আগামী ২৪ জানুয়ারি কোম্পানিটি দ্বিতীয় প্রান্তিক ঘোষণা করবে বলে আজ উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে জানায়। এই খবর প্রচারের পর কোম্পানিটির শেয়ার দরে বড় পতন প্রবণতা দেখা দেয়।
লাভেলো আইস্ক্রিম : টানা বাড়ার পর গত ৩ কার্যদিবস ধরেই কোম্পানিটির দর নেতিবাচক রয়েছে। গত ৩ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর কমেছে ৬ টাকা ১০ পয়সা। এর আগে ১০ কার্যদিবসে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ১৮ টাকা ২০ পয়সা। ওই ১০ কার্যদিবসে মাত্র ২দিন দর কমেছিল। গত ১৩ জানুয়ারি কোম্পানির দর ২ টাকা ১০ পয়সা বা ৪.২২ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ৫১ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। যা কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির পর সর্বোচ্চ। এদিন এই শেয়ারের দর ৪৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৫৩ টাকা ৪০ পয়সায় ওঠানামা করে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) : গতকাল সোমবার কোম্পানটির দর আগের দিনের তুলনায় ১২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯.৮৫ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১৩৮ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়, যা গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন এই শেয়ারের দর ১৩১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১৩৮ টাকা ৪০ পয়সায় ওঠানামা করে। গত ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দর ছিল ৩২ টাকা ৯০ পয়সা। ভালো মুনাফা প্রকাশ করায় বর্তমানে কোম্পানিটির পিই রেশিও ৭.২০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। আজ কোম্পানিটির দর ১৩৮ টাকা থেকে ১৪৮ টাকায় উঠানো হয়। তারপর পতন ঘটিয়ে ১৩৪ টাকায় নামানো হয়। সর্বশেষ লেনদেন হয় ১৩৬ টাকা ৭০ পয়সায়। এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর কোম্পানিটির দর ছিল ৪৯ টাকা ৪০ পয়সা। যা গতকাল দাঁড়িয়েছে ১৩৮ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৮ টাকা ৯০ পয়সা বা ১৭৯.৯৫ শতাংশ।
ওরিয়ন ইনফিউশন : আজ কোম্পানটির দর আগের দিনের তুলনায় ৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ৩.৫৫ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ১০৭ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়, যা গত ২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিন এই শেয়ারের দর ১০৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে ১১১ টাকা ৯০ পয়সায় ওঠানামা করে। গত ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দর ছিল ৫২ টাকা ৯০ পয়সা। বর্তমানে কোম্পানিটির পিই রেশিও ৩৭.৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এরমধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার একাধিক দিন বিক্রেতা সংকটে পড়ে হল্টেড হয়েছে।
তবে কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ শেয়ারের পিই রেশিও ভালো অবস্থানে। ফলে শেয়ারগুলোও বিনিয়োগ উপযোগী। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদিধর যথেষ্ট কারণও আছে। তবে যে প্রক্রিয়ায় শেয়ারগুলোর দরে উত্থান-পতন চলছে, তা কোনভাবেই স্বাভাবিক নয়। উত্থান-পতনের মহড়াই প্রমাণ করছে কোম্পানিগুলোতে কারসাজি চলছে।