নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাটি লিভারকে একসময় বলা হতো এটি মদ্যপায়ীদের অসুখ। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের কারণে লিভারে যেসব অসুখ ধরা পড়ে তার সাথে এটির মিল থাকলেও অ্যালকোহলের সাথে একদমই কোনো সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তিদের মধ্যেও এর প্রবণতা গত কয়েক দশক ধরে বাড়ছে।
যে কারণে ফ্যাটি লিভারের আলাদা নাম দেয়া হয়েছে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।
শুরুতে যার লক্ষণ নেই : ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফারুক আহমেদ বলছেন, দীর্ঘ দিন কারো ফ্যাটি লিভার থাকলে লিভার ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এর ফলে যকৃতে ফাইব্রোসিস, ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে।
তিনি বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে এর কোনো লক্ষণ নেই। একদম শুরুতে কোনো সমস্যা হয় না। তাই রোগীরা বুঝতে পারে না। অন্য কোনো সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কাছ গেলেই বেশিরভাগ সময় এটি ধরা পড়ে। এর জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম ও রক্ত পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। তবে এর পরের ধাপগুলোতে লক্ষণ শুরু হয়।
অধ্যাপক ফারুক আহমেদ সেগুলো সম্পর্কে ধারণা দিয়ে বলছেন, পেটের উপরের ডান দিকে, বুকের খাঁচার নিচে ডান দিকে ভারি লাগবে, একটা ব্যথা হবে। ক্লান্ত ও দুর্বল লাগবে সব সময়। ওজন কমতে থাকবে যার কোনো ব্যাখ্যা নেই। যদি খুব খারাপ পর্যায়ে চলে যায় তাহলে চোখের সাদা অংশ ও ত্বক হলুদাভ হয়ে যাবে, জন্ডিস হবে, ত্বকে চুলকানি দেখা দিতে পারে। পেট, গোড়ালি, পা ফুলে যাবে, রক্ত বমি, কালো পায়খানা হবে। এগুলো খুব অ্যাডভানস স্টেজে হয়।
বাংলাদেশে এর প্রবণতা : অধ্যাপক আহমেদ বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বে এর প্রবণতা অনেক বেশি হলেও আমরা ইদানীং দেখছি আমাদের কাছে ফ্যাটি লিভার নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি রোগী আসছেন। এমনকি গ্রামের মানুষ তাদেরও এটি হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা ভাবি যে শহরের মানুষ মোটা হয়ে থাকে আর গ্রামের মানুষ কায়িক পরিশ্রম করে বেশি তাই তাদের ওজন কম। কিন্তু আমাদের নিজেদের গবেষণা আছে। এমনকি গ্রামেও অনেকের ফ্যাটি লিভার পেয়েছি আমরা।
অধ্যাপক আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ফ্যাটি লিভার রয়েছে।
যেভাবে সাবধান হবে : যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস মেডিসিন বলছে, এটি এমন এক রোগ যা নীরবে লিভার বা যকৃতের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর লিভারের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অন্য সকল অঙ্গের সুস্থতা।
জন হপকিনস মেডিসিন বলছে ফ্যাটি লিভার সারিয়ে তোলার কোনো ওষুধ নেই। কিন্তু লিভারের নিজেকে সারিয়ে তোলার দারুণ ক্ষমতা রয়েছে।
সেজন্য অবশ্য দরকার জীবনাচরণ পরিবর্তন করা, লিভারে চর্বি জমার কারণগুলো নির্ণয় করে তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এর খারাপ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো প্রতিরোধ করা যায়।সূত্র : বিবিসি