নিজস্ব প্রতিবেদক: আর্থিক খাতের কোম্পানি ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের উন্নতির জন্য দুজন নিরপেক্ষ পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু কোম্পানিটির আর্থিক কর্মক্ষমতার কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। কোম্পানিটি যেন ধীরে ধীরে পিপলস লিজিং এবং বিআইএফসির পথেই অগ্রসর হচ্ছে।
কোম্পানির আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে, এটি এখন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) এর মতো ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে।
আর এর প্রভাব পড়েছে কোম্পানির শেয়ারের দামে। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এর শেয়ারের দাম ৫২ শতাংশ কমেছে এবং সর্বশেষ ৭ টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছে।
কোম্পানির দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্রটি ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। কোম্পানির মোট দায় তার সম্পদকে ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়াও, মূলধনের ঘাটতির কারণে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনেও কোম্পানির কর্মক্ষমতার কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। এই প্রান্তিকে কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
এর আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এফএএস ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপল লিজিংয়ের দায়ও সম্পদের পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে। ফারইস্ট ফাইন্যান্সও বর্তমানে একই পরিণতির মুখোমুখি হতে চলেছে৷
চৌধুরী তানজিম করিম বর্তমানে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের চেয়ারম্যান। প্রায় এক যুগ ধরে তিনি এই পদে আছেন। এছাড়া কোম্পানির পর্ষদে দুজন পরিচালক রয়েছেন, যারা পমাল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মনোনীত।
কোম্পানিটির একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অব্যবস্থাপনা, পরিচালক ও পৃষ্ঠপোষকদের সাথে যোগসাজশে ঋণ বিতরণ, খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি এবং তারল্যের ঘাটতির কারণে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল আজকের সংকটে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির বড় বিনিয়োগ রয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালের বাজার ক্র্যাশের পর বিনিয়োগ পোর্টফোলিও নেতিবাচক হয়ে যাওয়ায় এর বিপুল পরিমাণ মার্জিন ঋণ আটকে যায়।
কোম্পানিটি এখনও অদক্ষতা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। তারপরও কোম্পানিটি নিয়ম লঙ্ঘন করে ঋণ রাইট অফ করে চলেছে।
ইউনিয়ন ক্যাপিটাল তার সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ৫৩৮ কোটি টাকা আটকে গেছে, যেখানে তাদের মেয়াদি আমানত রয়েছে ৮৮০ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৪৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটি ১ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যার মধ্যে ১১০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে। এছাড়া কোম্পানির পরিচালকদের প্রভাবে ৪৭৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বেশির ভাগ ঋণের সুদ আদায় না হওয়ায় গত তিন বছর ধরে কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা। এই কারণেই সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কোম্পানিটি তার শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি।
এদিকে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কোম্পানিটিতে ১০০ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত রয়েছে। মেয়াদপূর্তির পরও প্রতিষ্ঠানটি তহবিল ফেরত দিতে পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোম্পানিটির কর্মকর্তাদের তলব করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং আমানতকারীদের তহবিল ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধে তেমন অগ্রগতি দেখাতে পারছে না।