নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের গতি ফেরাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তিন সুখবর থাকছে। এগুলো হলো- করপোরেট হার হ্রাস, অপ্রর্দশিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ এবং শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানিকে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিতকরণ।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে আলোচ্য তিন সুযোগ দেওয়া হলে শেয়ারবাজারের সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট হবে এবং বাজারের স্থিতিশীলতা আসবে।।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে করপোরেট কর হার কমানো, অপ্রর্দশিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের সুযোগ এবং ডলারের সংকট মেটাতে রপ্তানি পণ্যের জন্য রাখা হচ্ছে বিশেষ প্রণোদনা; যার বেশিরভাগই পাবে তৈরি পোশাক ও ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, করপোরেট কর কমানো এবং অপ্রর্দশিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধাসহ বেশি কিছু বিষয় বাজেটে রাখার জন্য প্রস্তাব করেছি। দেশের অর্থনীতি, শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আমরা সরকারের কাছে এই প্রস্তাব রেখেছি, আশা করছি বিষয়গুলো বাজেটে থাকবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করপোরেট কর কমানো সুখবর। তবে ঢালাওভাবে না কমিয়ে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা দিতে হবে। এতে ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে।
তিনি বলেন, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পর খুব বেশি অর্থ শেয়ারবাজারে যে আসছে তা নয়, তবে মনস্তাত্ত্বিকভাবে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডলারের সংকট মেটাতে রপ্তানি পণ্যের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন তিনি।
এনবিআর সূত্র বলছে, আসন্ন বাজেটে করপোরেট কর ২.৫০ শতাংশ কমানো হতে পারে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন ১০ শতাংশের বেশি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজারে ছাড়তে হবে। পাশাপাশি বার্ষিক ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগ ছাড়া সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে করতে হবে।
বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ কোম্পানির কর হার ২২.৫০ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমে ২০ শতাংশ করা হতে পারে। এক ব্যক্তির মালিকানার কোম্পানির কর ২৫ শতাংশ থেকে কমে ২২.৫০ শতাংশ করা হতে পারে।
সূত্রমতে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক-বিমা, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস সেবাদানকারী কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭.৫০ শতাংশ। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ৪০ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ৩৭. ৫০ শতাংশ রয়েছে। এছাড়া সিগারেট, বিড়ি, জর্দাসহ তামাকজাত কোম্পানির ৪৫ শতাংশ এবং মোবাইল অপারেটরদের কর হার ৪৫ শতাংশ। সেখান থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৪২.৫০ শতাংশ করা হতে পারে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে বিনা প্রশ্নে শেয়ারবাজারে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ২৮৬ জন বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।
বিদায়ী অর্থবছরে প্রত্যাশা অনুসারে বিনিয়োগকারীরা কালো টাকা বিনিয়োগ না করায় নতুন অর্থবছর থেকে সাধারণ ক্ষমার (ট্যাক্স অ্যামনেস্টি) সুবিধা বাতিল করছে সরকার। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে আয়কর অধ্যাদেশের ১৯(ই) ধারা অনুযায়ী, নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কোনো প্রশ্ন করবে না এমন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আর ন্যূনতম এক বছর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ধরতে রাখতে হবে এই নিয়ম থাকছে না। পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বিধানও মানতে হবে না।
অপরদিকে, ডলার ও বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যা আগের বছরের জন্য ছিল ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে ৪৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়া এবং ওষুধ খাতসহ ৪২টি পণ্যের কারখানাগুলো এই সুবিধা পাবে। এতে ডলারের সংকটের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।