নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে আর্থিক অনিয়মের দায়ে সম্প্রতি অপসারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরফলে শূন্য হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির এমডি পদ।
এমন পরিস্থিতিতে এক সময়ের আর্থিকভাবে শক্ত প্রতিষ্ঠানটির নতুন এমডি ও সিইও খোঁজা শুরু হয়ে্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৬ জুলাই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও সিইও পদের জন্য আবেদন যোগ্যতা হিসেবে মাস্টার্স বা এমবিএ পাস চেয়েছে। তবে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং, ইকোনমিক্স বিষয়ে ডিগ্রি থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ফ্রেস বিজনেস অ্যাকুইজিশন, ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ক্রেডিট রিস্ক অ্যানালাইসিস, বিজনেস প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, এসএমই, রিকোভারি, ব্রাঞ্চ ম্যানেজমেন্ট, মার্কেট ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আর্থিক খাতে কমপক্ষে ২০ বছর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এরমধ্যে অন্তত ২ বছর এনবিএফআই ডিপার্টমেন্টে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রার্থীর বয়সসীমা ৫২ বছর। চূড়ান্ত নিয়োগের পর ঢাকায় কাজের আগ্রহ থাকতে হবে। বেতন ও সুযোগ সুবিধা কোম্পানির নীতিমালা অনুসারে দেওয়া হবে। আবেদনের শেষ তারিখ ১৭ জুলাই, ২০২২ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ প্রতিষ্ঠানটির এমডি এস এম শামসুল আরেফিনকে অপসারণ করে চিঠি দেয়। যা ওই দিন থেকেই কার্যকর হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেওয়া অপসারণের চিঠিতে বলা হয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ এর ২০(৩) ধারার আওতায় উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে বিশেষ নিরীক্ষা সম্পাদনের জন্য নিযুক্ত সিএ ফার্ম রহমান রহমান হকের (কেপিএমজি) করা বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটিতে সংঘটিত ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থেকে প্রতিষ্ঠান ও আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শামসুল আরেফিনকে ২৩ জুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে আরেফিন জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এস এম শামসুল আরেফিন দায়িত্বে আসার পরে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে বেসরকারি খাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান উত্তরা ফাইন্যান্স। অনুমোদন ছাড়াই ঋণ নিয়েছে পরিচালকরা। নামে বেনামে করেছে অর্থ আত্মসাৎ। ঋণ-আমানতের তথ্যে রয়েছে গড়মিল। বারবার সতর্ক করার পরও টনক নড়েনি। নানা অজুহাত দেখিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন দিতে কালক্ষেপণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। পরে বাধ্য হয়ে অনিয়ম খুঁজে বের করতে উত্তরা ফাইন্যান্সে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে ২০১৮ সালে তিন গ্রাহকের ঋণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) ভুল তথ্য পাঠিয়েছিল উত্তরা ফাইন্যান্স। পরে ওই তিন গ্রাহককে ঋণ দিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ভুল তথ্য দেওয়ায় অপরাধে উত্তরা ফাইন্যান্সকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে জরিমানা মওকুফ চেয়ে আবেদন করলেও তা নাকচ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে উত্তরা ফাইন্যান্সের কেলেঙ্কারির প্রমাণ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক পরিচালকে ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়েই নিয়ম বর্হিভূত ভাবে ঋণ নিয়েছেন।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তাদের অনেক লেনদেনের তথ্য গোপন করতে নথিপত্রও গায়েব করে ফেলে।
এসব অনিয়মের কারণে উত্তরা ফাইন্যান্সের ২০১৯ ও ২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদন সংশোধনের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।