নিজস্ব প্রতিবেদক: মানুষ ক্রমশ আধুনিক জীবন যাপনে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের মাঝে সন্তান জন্মদানে অনীহা তৈরি হচ্ছে। এরফেলে বিশ্বের অনেক দেশেই আশঙ্কাজনক হারে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এই প্রবণতা উন্নত বিশ্বের সরকারগুলোর জন্য এটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি জোয়ার তৈরি হয়েছিল। যদিও এই বৃদ্ধির বেশিরভাগই ঘটেছে চীন এবং ভারতে। কিন্তু সেই প্রবণতায় উল্টো দিকে মোড় নিচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরবর্তী জোয়ার তৈরি হবে আফ্রিকায়। উদাহরণস্বরূপ তারা বলছেন, ২০১৯ সালে নাইজারের নারীরা গড়ে ছয়টিরও বেশি সন্তান ধারণ করছেন। এর বিপরীতে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে আশঙ্কাজনক হারে সঙ্কুচিত হচ্ছে সন্তান জন্মদানের হার। সন্তান জন্মদানের এই প্রবণতার উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের সাহায্যে একটি ইনফোগ্রাফ তৈরি করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার একটি গড় তৈরি করা হয়েছে।
জনসংখ্যা কমে যাওয়ার সেই তালিকার শীর্ষ ২০ দেশের কাল্পনিক ইনফোগ্রাফ তুলে ধরা হলো। এই দেশগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পূর্ব ইউরোপে বা তার কাছাকাছি অবস্থিত। এর কারণ আমরা নীচে আলোচনা করব।
জন্মের হার কমে যাওয়াই প্রধান সমস্যা
পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স (পিআইআইই)-এর মতে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই অঞ্চলজুড়ে সন্তান জন্মদান প্রবণতা কমে গেছে।
১৯৮৮ সালে এই অঞ্চলের নারীদের সন্তান জন্মদানের গড় ছিল ২ দশমিক ১ যা ১৯৯৮ সালের মধ্যে ১ দশমিক ২ এ নেমে আসে।
জন্মের হার তখন থেকে কিছুটা পুনরুদ্ধার হলেও তা যথেষ্ট নয়। কেননা মৃত্যুর হার ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হার জন্মহারের চেয়েও বেশি।
এছাড়া যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের জনসংখ্যার বিশাল একটি অংশ ইতোমধ্যেই দেশ ছেড়েছে। এই দেশের জন্মহারও অত্যন্ত কম।
জাপান
সন্তান জন্মাদান হ্রাসের শীর্ষে রয়েছে সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। যেখানে ১৯৭০ সাল থেকেই জন্মের হার ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। তবে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশটির সামগ্রিক জনসংখ্যা কমতে শুরু করেনি। জাপানে সন্তান জন্মদানের হার অত্যন্ত ভয়াবহ আকারে কম। ২০২১ সালে জাপানে ৮ লাখ ১১ হাজার ৬০৪টি শিশুর জন্ম হয়েছে, মারা গেছে ১৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। কম জন্মহারের ফলে এশিয়ার এ দ্বীপরাষ্ট্রেই বিশ্বের সর্বোচ্চ গড় আয়ু ৪৯ বছর। জাপান সরকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি চালু করেছে শিশু জন্মদানকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য। তবে এগুলো সমস্যার সমাধানে কার্যকরী কিছু হচ্ছে না।
কিউবা
সন্তান জন্মাদান কমে যাওয়ার শীর্ষ দ্বিতীয় দেশ হচ্ছে কিউবা। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে বামপন্থী শাসিত এ দেশটিতে নারীদের প্রজননের হার মাত্র ১ দশমিক ৭, যা লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর সাথে মেক্সিকো (২.২), প্যারাগুয়ে (২.৫), এবং গুয়াতেমালা (৩.০) এর মতো দেশগুলোর তুলনা করা যেতে পারে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কিউবার নাগরিকদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা অবিশ্বাস্য হারে কম। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের মতে, অভিবাসীরা কিউবার মোট জনসংখ্যার মাত্র শূন্য দশমিক এক (০.১%) শতাংশ।