নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর গণপরিবহনে যুক্ত হলো ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। এর ফলে ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টরের-যাত্রী প্রতিদিনকার বচসা দুরীভূত হবে বলেই মনে হয়।
রাজধারীসহ সারা দেশেই গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য দীর্ঘদিনের। সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও তা মানতো না কোনো কোনো গণপরিবহন। এ বিষয়ে যাত্রীদের অভিযোগেরও অন্ত ছিল না। কিছুদিন আগে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে সুস্থতার ইঙ্গিত দিয়েছিল ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এখন যার সুফল পাচ্ছে যাত্রী থেকে মালিক সবাই।
গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে রাজধানীতে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু হয়েছে। এতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য থেকে মুক্তির বার্তা মিলেছে। এর মাধ্যমে চার্ট অনুযায়ী আদায় করা হচ্ছে ভাড়া। কাউন্টারে একটি পজ মেশিনের মাধ্যমে যাত্রীরা টিকিট কেটে গাড়িতে ওঠছেন।
শুক্রবার থেকে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ঢাকেশ্বরীগামী মিরপুর সুপার লিংক, ঘাটারচর থেকে উত্তরাগামী প্রজাপতি ও পরিস্থান এবং গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী বসুমতি পরিবহনের বাসে এ পদ্ধতিতে ভাড়া আদায় শুরু হয়েছে।
ই-টিকিটিং-এর বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় ঠেকাতে ই-টিকিটিং একটি কার্যকর পদ্ধতি। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহনে চালু করেছি, যাত্রীদের কাছ থেকে ভালো রেন্সপন্স পাচ্ছি। এ সপ্তাহেই আরও তিনটি রুটে চালুর পরিকল্পনা আছে।’
ডিজেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমার পর গত ৩১ আগস্ট বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে বাস-মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে এ অনিয়ম ঠেকাতে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতা এনায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেছিলেন, ‘ঢাকার ১২০টি কোম্পানির এমডি-চেয়ারম্যানদেরকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ওয়েবিল থাকবে না। কিন্তু মালিকরা বলছে, ওয়েবিল বন্ধ করে দেয়ার পর তাদের যা ইনকাম আসত, তার তিন ভাগের এক ভাগ আসে। এতে তারা যাত্রীদের হিসাব পায় না।‘
এখন ই-টিকিটিং পদ্ধতি যেসব পরিবহনে চালু হয়েছে, সেসবের মালিক সহজেই দিনের আয়ের হিসাব পাবেন। এ পদ্ধতি চালুর পর থেকে ‘ওয়েবিল’র সঙ্গে বড় ধরনের ফারাক দেখছেন যাত্রীরা। আগে যে গন্তব্যে যেতে ২০ থেকে ২৫ টাকা গুনতে হতো এখন সেখানে ভাড়া নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা। সুপারভাইজারের সাথেও যাত্রীদের এখন কথা কাটাকাটি হচ্ছে না। এতে যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনের কর্মীরাও স্বস্তিতে আছেন।
পরিস্থানের সুপারভাইজার শাহ জালাল জানান, ‘বাসে চড়ার পর আগে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিনই তর্ক হতো। কারণ, সরকারের চার্টের সঙ্গে ওয়েবিলের ভাড়া বেশি ছিল। যাত্রীরা ওই ভাড়া দিতে চাইত না, কিন্তু মালিকদের হিসেব আমাদের ঠিকই বুঝিয়ে দিতে হতো। কখনো কখনো যাত্রীদের বুঝাতে পারলেও বাকি সময় নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে মালিকের হিসেব বুঝিয়ে দিতে হতো। এখন কারো সাথে তর্ক করতে হয় না। যাত্রীরা টিকিট কেটে বাসে ওঠে, আমরা শুধু চেক করি টিকিট আছে কি না। মালিকের সাথে এখন আমাদের কোনো ঝামেলা নেই।’
তিনি জানান, এখন সব হিসেব মেশিনে থাকে। দিন শেষে মালিকপক্ষের লোক এসে মেশিনে কত টিকিট বিক্রি হয়েছে তা দেখে সেই হিসেবে টাকা নিয়ে যাবে।
নূর-ই মক্কা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যেসব কোম্পানি ই-টিকিট চালু করেছে আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি, বিষয়টি বেশ সুবিধাজনক। প্রতিদিন কত টাকা ভাড়া উঠছে, সে হিসাব মেশিনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে; যাত্রীরাও সুফল পাচ্ছে। ফলে আমরাও এ ব্যবস্থায় যেতে আগ্রহী হয়েছি।’