নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেন হয়েছে ৩৭৭ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৪৯৪ টাকা। এরমধ্যে তারা ৪৪ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজার ৪৮১ টাকার শেয়ার কিনেছে। বিপরীতে বিক্রি করেছে ৩৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ কেনার তুলনায় ২৮৯ কোটি ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩২ টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছে। যা কেনার তুলনায় সাড়ে সাত গুণ বেশি।
এর আগের মাস আগস্টে বিদেশিদের শেয়ার কেনা-বেচা বাবদ লেনদেন হয়েছিল ৭৫৪ কোটি ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার ১১৩ টাকা। এর মধ্যে শেয়ার কিনেছিল ৮৬ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার ৩৯৫ টাকার। আর শেয়ার বিক্রি করেছিল ৬৬৮ কোটি ৪২ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৮ টাকার। আগস্টে তারা শেয়ার কেনার চেয়ে ৫৮২ কোটি ২১ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৩ টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছিল।
শেয়ারবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ শুধু গত দুই মাসে কমেছে তা নয়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায়ও বিদেশিদের লেনদেন ও নিট বিনিয়োগ কমেছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশিদের শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৫০১ কোটি ৫০ লাখ ৯ হাজার টাকার। সেই বছর কেনার চেয়ে ২১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছিল। অর্থাৎ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায়ও ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশিরা ৭৮ কোটি টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছে।
বিদেশিরা কখনো লোকসানের জন্য বিনিয়োগ করেন না। যখন নিশ্চিত হন যে মুনাফা হবে তখন তারা বিনিয়োগ করেন। এখন বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থা ও ডলারের বাজারে অস্থিরতার কারণে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি তুলে নিচ্ছেন তারা।
শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ-সিডিবিএলের তথ্যে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে ৩০৮ জন বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারী তাদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার ছেড়েছেন। তার পরের মাস অক্টোবরে বাজার ছেড়েছে আরও ৬৬ জন বিওধারী। গত ১ সেপ্টেম্বর বিদেশিদের বিও হিসাব ছিল ৬৩ হাজার ৪২১টি। সেখান থেকে ৩৭৪টি কমে গত ২ নভেম্বর বিদেশীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৪৭টিতে।
বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে বলে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা কমলেও প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। এই কারণে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি বলেন, কারেন্সি যখন দুর্বল হয় ডলার তখন স্ট্রং হয়, তখন এক্সিস্টিং ইনভেস্টররা ফরেন এক্সচেঞ্জ ফ্লাকচুয়েশন রিস্ক মিনিমাইজ করার জন্য সেল করে দেয়। তবে যারা নতুন ইনভেস্টর, যারা ডলার বাংলাদেশে নিয়ে আসে, তাদের জন্য ডলারের দাম বেনিফিট হিসেবে কাজ করে। তারা কম ডলার এনে বেশি টাকার শেয়ার কিনতে পারবে।
রেজাউল করিম বলেন, ডলারের ঊর্ধ্বগতি আগামী এক কিংবা দুই মাসের মধ্যে কিছুটা কমে আসবে। কারণ রপ্তানি আগের তুলনায় বেড়েছে। ডলারের দাম কমে গেলে বর্তমান বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি কমে যাবে। নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসবে। এর ফলে আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে বিদেশিদের শেয়ার কেনার অর্ডার বেশি থাকবে। তিনি জানান, এখন কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসার জন্য পথ খুঁজছেন।