নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ রাশিয়ার তেল প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারে কেনার ঐকমত্যে পৌঁছেছে । আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল সরবরাহে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তার আগেই রুশ তেলের দাম নির্ধারণের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালো পশ্চিমা দেশগুলো।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও চীন ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে।
এ কারণে পশ্চিমা শক্তিগুলো গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ডিসেম্বরের মধ্যে তেলের দাম কমানোর বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। পশ্চিমারা মূলত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধে অর্থায়নের জন্য তেল বিক্রি থেকে বিরত রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ সাতটি অর্থনীতির দেশ জি-৭ কম দামে রাশিয়ার অফশোর অপরিশোধিত তেল কেনার প্রস্তাব করেছে। ধনী দেশগুলির গ্রুপটি প্রস্তাব করেছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতি ব্যারেল ৬৫ থেকে ৭০ ডলারের এর মধ্যে তেল কিনবে, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত মূল্য মোট ৫ শতাংশ কমিয়ে দেবে।
তবে ইউক্রেনের চাওয়া ছিল, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ ডলারে বেঁধে দিক। ইউক্রেনের পাশাপাশি পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়ার দাবি ছিল, রুশ তেলের দর ৬০ ডলারের অনেক কম নির্ধারণ করা হোক। তবে গ্রিস, সাইপ্রাস ও মাল্টা জানায়, রুশ তেলের দাম একটু বেশি নির্ধারণ করা হোক।
কিন্তু সম্প্রতি ইউরোপীয় কূটনীতিকদের এক বৈঠক সূত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, রুশ তেলের দাম ৬৫ থেকে ৭০ ব্যারেল নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে এই দর নিয়েও বিতর্ক চলছিল। কারণ, জ্বালানির এই দর বর্তমানে রুশ অপরিশোধিত তেলের দরের কাছাকাছি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৭০ ডলারের কথা বলে আসলেও চলতি সপ্তাহে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম অন্তত ৬০ ডলার হওয়া উচিত । গত বুধবার মস্কোয় এক বিনিয়োগ সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় পুতিন বলেন, তেলের বর্তমান মূল্য ‘ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য’ এবং আগামী বাজেট বাস্তবায়নের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন তার জন্য মানানসই।
শেষ পর্যন্ত কার্যত রাশিয়ার প্রস্তাবই মেনে নিল ইউরোপ। পুতিনের চাওয়া ৬০ ডলারেই তেল কিনবে তারা। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ইইউ কূটনীতিকরা জানান, তাদের এই সিদ্ধান্তে তথা ৬০ ডলারে তেল কেনার চুক্তিতে সম্মতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পরদিন শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) চুক্তির প্রতি সমর্থন জানায় পোল্যান্ডও। আল জাজিরা জানায়, রোববার (৪ ডিসেম্বর) চুক্তিটি বিস্তারিত ইইউ’র আইনি জার্নালে প্রকাশ হওয়ার কথা।
আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল সরবরাহে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তার আগেই একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো ইউরোপের জন্য বেশ জরুরি ছিল। কারণ যেসব জাহাজ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিবহন করবে, তাদের ক্ষেত্রে বিমা প্রযোজ্য হবে না।
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে চীন, ভারতসহ আর যেসব দেশ রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, তারা বিপাকে পড়বে। কারণ, জাহাজের অধিকাংশ বিমাকারী ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক।