নিজস্ব প্রতিবেদক: কনসালটেন্সি ফার্মের প্রতারণায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে এক তরুণীর। স্বপ্নের যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে সিলেটের এক তরুণী দিয়েছিলেন অক্সফোর্ড গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত ইংরেজি শিক্ষার পরীক্ষা (ওআইটিসি)। পরীক্ষার আগে প্রায় চার মাস ধরে নিয়েছিলেন প্রস্তুতি। সে অনুযায়ী প্রত্যাশিত ফলও হয়েছিল। তবে তিনি যেতে পারেন নি যুক্তরাজ্যে। তার নামে সার্টিফিকেটে নাম পরিবর্তন করে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছেন এক তরুণ। অবাক করা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সিলেট নগরীর হাওয়াপাড়ায় অবস্থিত এসএমএস হায়ার এডুকেশন নামক কনসালটেন্সি।
প্রতারণার শিকার তরুণীর নাম হাবিবা হক ইমা। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের আকিকুল ইসলামের মেয়ে। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা বাদী হয়ে সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করেছেন।
প্রতারণার শিকার তরুণী জানান, ২০২১ সালের নভেম্বরে ওআইটিসি পরীক্ষা দেন তিনি। এর পর যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এসএম হায়ার এডুকেশনে গেলে প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ বদরুল ইসলাম হামজা তার কাছ থেকে ই-মেইল অ্যাড্রেসসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্যাদি রাখেন। সেই সঙ্গে যে ই-মেইল থেকে ওআইটিসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল সেই ই-মেইলও রাখেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তার ভর্তি সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতি না দেখে ফের তিনি প্রতিষ্ঠানে গেলে জানতে পারেন প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ হামজা পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাজ্যে।
তিনি জানান, এ সময় প্রতিষ্ঠানের অন্য এক কর্মকর্তা হামজার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইমার ভর্তির আবেদন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর সেশনে ডেফার্ড করা হয়েছে বলে জানান। সে অনুযায়ী অপেক্ষায় ছিলেন ইমা। কিন্তু চলতি বছরের জুলাই মাসে নিজের ই-মেইল থেকে ওআইটিসির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখতে পান তার সার্টিফিকেটের নামের স্থলে ‘সৈয়দ বুরহান আহমদ’ লেখা রয়েছে। এর পর কয়েক দফায় এসএমএস হায়ার এডুকেশনে গেলেও কোনো সদুত্তর পাননি। এমনকি এসএমএস হায়ার এডুকেশনের ফেসবুক পেজ ঘুরে দেখেন বেশ কিছু দিন আগে সৈয়দ বুরহান আহমদ নামে এক তরুণ ভিসা পেয়েছেন। যার পর বদরুল ইসলাম হামজা তাকে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। তখনই তার সন্দেহ হয়। তার পর থেকে নানাভাবে হামজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সমাধান পাননি।
অপরদিকে ইমার ভাই রায়হান আহমদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তিনি খোঁজ নিয়ে বের করেন সৈয়দ বুরহান আহমদকে। সার্টিফিকেটের ব্যাপারে বুরহানের সঙ্গে কথা বলেন। তখন বুরহান আহমদ জানান, তিনি টাকার বিনিময়ে এসএমএস হায়ার এডুকেশনের ইনচার্জ হামজার কাছ থেকে সার্টিফিকেট কিনে বিদেশে এসেছেন। বুরহানের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড প্রতিবেদককে দিয়েছেন হাবিবার ভাই রায়হান।
এদিকে সার্টিফিকেট জালিয়াতির এ ঘটনায় এসএমএস হায়ার এডুকেশন ইনচার্জ বদরুল ইসলাম হামজা, সৈয়দ বুরহান আহমেদ, এসএমএস হায়ার এডুকেশন গ্রুপ অপারেশনস ইঞ্জিনিয়ার আল আমিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এসএমএস উচ্চ শিক্ষা. সালমান উদ্দিন।
তবে এসএমএস হায়ার এডুকেশন এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিলে জানা যায়, হামজার পরিবর্তে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে রয়েছেন মজিদুল ইসলাম জনি। তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে ওআইটিসি পরীক্ষায় প্রতারণাসহ নানা কারণে সিলেটের শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে পড়ার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড সিলেট থেকে শিক্ষার্থী নেওয়া বন্ধ করেছে। এমনকি দেশের আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট থেকে শিক্ষার্থী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ফরেন অ্যাডমিশন কনসালটেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সিলেট জোনের সভাপতি ফিরদৌস আলম মন্তব্য করেন, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীসহ সবার সচেতন হওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, কিছু কনসালটেন্সি আছে যেগুলো মৌসুমী। তারা যেটা করতে চায় সেটাই বেশি করে লোভ দেখিয়ে। এমনকি বেশির ভাগ শিক্ষার্থীও পড়ালেখা করে না। এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবে এই শিক্ষার্থীদের। তাই কষ্ট হলেও পড়াশোনায় লেগে থাকলে অনেক উপকার পাবেন। এছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যা বলে তা না করে বিদেশ যাওয়ার আগে কিছু তদন্ত করার পরামর্শও দেন তিনি।