নিজস্ব প্রতিবেদক: উন্নয়নশীর দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করতে বর্তমান সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনেতিক মন্দায় সারা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। ফলে অনেক উন্নত দেশও নিজেকে অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের যাতে সেটা করতে না হয়, সেজন্য আমরা কৃচ্ছতা সাধনের কথা বলেছি। আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ আমরা কমিয়ে দিয়েছি।’
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলের ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প স্থগিত রাখা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইভিএমে ৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে। কাজেই এটা পরিকল্পনা কমিশন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর্থিক সংকট অবশ্যই সারা বিশ্বব্যাপী আছে, আমাদের সংকট এমন পর্যায়ে নেই যে আমরা চলতে পারবো না। তবে এই মুহূর্তে আমাদের অগ্রাধিকার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা, মানুষের কল্যাণ আগে দেখা। আবার কৃষি উৎপাদন যাতে বাড়ে সেজন্য যা খরচ লাগে আমি তা করবো। মানুষের চিকিৎসা খাতে যা লাগে তা করবো।’
‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩’ নিয়ে গত রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। ডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়, এবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নির্দেশনা গ্রহণের পাশাপাশি স্পিকার ও বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জেলা প্রশাসকরা সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ ও মতবিনিময় করবেন। তাছাড়া সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক সমন্বয় বিষয়ক অধিবেশন সংযুক্ত করা হয়েছে সম্মেলনে।
এবার সম্মেলনে মোট ২৬টি অধিবেশন হবে। এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ২০টি। এছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে একটি, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে একটি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে হবে দুটি অধিবেশন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এ বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রস্তাব পাওয়া গেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সংক্রান্ত। এ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাব ২৩টি। এরপর ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১৫টি প্রস্তাব ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১৩টি, সুরক্ষা সেবা বিভাগ সংক্রান্ত ১১টি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১০টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে।
এবারের ডিসি সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলো হলো- স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদারকরণ; ভূমি ব্যবস্থাপনা; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন; এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।