লাইফস্টাইল ডেস্ক: বর্তমান সময়ে নারী পুরুষের কঠিণ এক সমস্যা হচ্ছে বন্ধ্যত্ব। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হতে পারে। তবে মাদকগ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও হরমোনজনিত সমস্যা বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ হিসাবে ধরা হয়।
এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বি আই এইচ এস হাসপাতালের ফার্টিলিটি কনসালটেন্ট ও গাইনোকোলজিস্ট ডা. হাসনা হোসেন আখি।
বন্ধ্যত্ব দুধরনের। প্রাইমারি, অর্থাৎ যাঁদের কখনো সন্তান হয়নি। সেকেন্ডারি, অর্থাৎ যাঁদের পূর্বে গর্ভধারণ হয়েছে, পরে আর হচ্ছে না।
পূর্বাপর বিবেচনা অনুযায়ী দেখা যায় ৮০ শতাংশ দম্পতি সাধারণ চেষ্টায় প্রথম বছরই গর্ভধারণে সমর্থ হন। দশ শতাংশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বছরে গর্ভধারণ হয়। বাকি যে দশ শতাংশ থাকে তাদের মূলত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সুতরাং, বিয়ের পর সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক থেকে দুই বছর নিজেরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া উচিত। বন্ধ্যত্ব ৪০ শতাংশ নারী, ৪০ শতাংশ পুরুষ, বাকি ২০ শতাংশ নারী-পুরুষের কারণে হয়ে থাকে।
মেয়েদের বন্ধ্যত্বের কারণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে কারণ হচ্ছে, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, এন্ডোমেট্রিওসিস, ফাইব্রয়েড, হরমোনজনিত সমস্যা, জরায়ু ইনফেকশন, এডিনোমাইসিস ইত্যাদি।
পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে, স্পার্মের সংখ্যা, আকৃতি এবং গতির সমন্বয় ঠিক না থাকা, সঙ্গে হরমোনজনিত সমস্যা, ডায়াবেটিস ও ধূমপান।
>> প্রতিকার হিসাবে নারী/পুরুষ উভয়কে যে উপদেশ দেওয়া হয়।
>> খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা, শর্করাজাতীয় খাবার কমিয়ে প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খেতে হবে এবং প্রসেসফুড, জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড, কফি, অ্যালকোহল, কোমল পানীয়, ধূমপান বাদ দিতে হবে।
>> সঠিক বিএমআই নির্ণয় করতে হবে অর্থাৎ উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন নিশ্চিত করতে হবে। স্থূলতা বাদ দিতে হবে।
>> রাতে আগে ঘুমানো এবং ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে।
>> নিয়ম মতো হাঁটাহাটি এবং শরীরচর্চা করতে হবে।
>> সানবাথ বা শরীরে সূর্যের আলো লাগাতে হবে, কারণ ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতি বন্ধ্যত্বের অন্যতম একটি কারণ।
>> বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় স্বামী/স্ত্রী উভয়েরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে সংকোচ, দ্বিধা রাখা যাবে না।
>> সময় মত ধৈর্য নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে, চিকিৎসকের পরামর্শ শুনতে হবে, মানতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পরও যদি কোনো দম্পতি সন্তান লাভে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে তার টারশিয়ারি লেভেলের একটি ফ্যাটিলিটি সেন্টারে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। আধুনিক চিকিৎসার যেসব পদ্ধতি বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ট্র্যান্স ভ্যাজাইনাল সোনোগ্রাফি, স্যালাইন ইনফিউশন সোনোগ্রাফি (টিউব দেখার জন্য), আই ইউ আই, আইভিএফ বা টেস্টটিউব বেবি, ল্যাপেরোস্কপি, হিস্টোরিস্কপি, ইকসি, প্রি ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক ডায়াগনোসিস, প্রিজারভেশন অফ ওভারি অ্যান্ড টেস্টিস ইত্যাদি।
বন্ধ্যত্বের মতো অতিশয় সমস্যার সমাধান ও বর্তমানে খুব সহজে করা যাচ্ছে। প্রয়োজন শুধু আপনার সদিচ্ছা, সচেতনতা এবং সুচিকিৎসা নেওয়া।