নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ডলার সংকটে দেশের বস্ত্র খাত এখন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে। চাহিদা অনুযায়ী ডলার না পাওয়ায় এ খাতের উদ্যোক্তারা কাঁচামাল আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারছেন না। এমনকি মেরামতের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানি করতেও সমস্যা হচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট তো আছেই। এরফলে রপ্তানিমুখী বস্ত্র খাতসহ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়ে বস্ত্র মিলগুলোতে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হচ্ছে।
এতে একদিকে উৎপাদন ব্যয় যেমন বেড়ে গেছে, অন্যদিকে কাঁচামাল সংকটের কারণে মিলগুলো পুরোদমে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্গত কারণে এ সেক্টরে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেকার হতে পারেন হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী।
বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়ার প্রভাব চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (জুলাই- ডিসেম্বর'২২) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে লক্ষ্য করা গেছে। শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ৫৮ টি কোম্পানির মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানির কমেছে আয়। এছাড়াও বেশ কিছু কোম্পানি লোকসানে রয়েছে।
ডলার সংকটের কারণে এলসি করতে না পারায় এবং কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিগুলোতে এমন প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বস্ত্র খাতের রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কমেছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। একই সময়ে কাঁচামালের আমদানিও কমেছে ২ শতাংশ। এলসি খোলা কমে যাওয়ায় আগামীতে এসব খাতের কাঁচামাল আমদানিও কমে যেতে পারে।
অথচ গত অর্থবছরে রপ্তানিমুখী বস্ত্র খাতের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছিল ৪০ শতাংশ ও আমদানি বেড়েছিল ৫৭ শতাংশ। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। ডলারের জোগান না থাকায় উদ্যোক্তারা ব্যাংকে গিয়েও এলসি খুলতে পারছেন না।
ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ৬৬৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা হয় ৪৪৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের। এ সময়ে এলসি খোলা কমেছে ৩২ দশমিক ৮২ শতাংশ।গত অর্থবছরের একই সময়ে এসব খাতের কাঁচামাল আমদানি করা হয় ৫৪২ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের।
চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি করা হয় ৫৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। এ সময়ে আমদানি কমেছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রপ্তানিমুখী ও বাণিজ্যিকভাবে কাপড় আমদানির এলসি খোলা কমেছে ২৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, আমদানি কমেছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। প্রাইমারি টেক্সটাইলের প্রধান কাঁচামাল তুলা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, আমদানি কমেছে ২৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্লাস্টিকের তৈরি সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৬২ দশমিক ৭২ শতাংশ ও আমদানি কমেছে ২৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। সিনথেটিক ফাইবার ও ইয়ার্ন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৮ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
বর্তমানে ৮০ ভাগ মিল মালিক লোকসান দিয়ে সুতা বিক্রি করছেন। নতুন তুলার দাম কিছুটা সহনীয়। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে তুলার অর্ডার দেওয়া যাচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে শঙ্কিত মালিকরা।