নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে সরবরাহে সংকটের মধ্যেই ফেব্রুয়ারি মাসে দাম বাড়ানো হয়েছে এলপিজির। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন এই দাম ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।
তবে দাম বাড়লেও বাজারে এলপিজির সংকট সহসাই মিলছে না বলে জানিয়েছেন কোম্পানি-সংশ্লিষ্টরা। সংকটের কারণে পণ্যটির দামও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলছে। বিভিন্ন কোম্পানির ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার এখন ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারপরও গ্রাহকরা পাচ্ছে না। একাধিক খুচরা বিক্রেতা জানান, কোম্পানিগুলো থেকেই বেশি দামে এলপিজি গ্যাস কিনতে হচ্ছে। এর ওপর অনেক কোম্পানির সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব কোম্পানির সিলিন্ডার পাওয়া যায়, সেগুলো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে এর সতত্যা পাওয়া গেছে। কাওরান বাজার, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর বাজারের একাধিক পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বর্তমানে দু-একটি কোম্পানি ছাড়া অধিকাংশ কোম্পানির সিলিন্ডার নেই। আগে যারা ৫-৬টি কোম্পানির এলপিজি গ্যাস রাখতেন, বর্তমানে দুই থেকে তিনটি কোম্পানির এলপি গ্যাস পাচ্ছেন। সেটাও আবার চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
গতমাসে ৭টি কোম্পানির প্রায় ২৫০ সিলিন্ডার বিক্রি করতেন। জানুয়ারি মাসে মাত্র দুটি কোম্পানির ১০২টি ১২ কেজির সিলিন্ডার বিক্রি করেছেন বলে জানান কাওরান বাজারের মালিহা এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা রবিউল হক। তিনি আরও জানান, এখন অগ্রিম টাকা দিয়েও কোম্পানিগুলো থেকে এলপি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানি থেকে বলা হচ্ছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত গ্যাস নেই।
বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের চিফ অপারেটিং অফিসার এমএম জসিম উদ্দিন বলেন, এটা ঠিক, বাজারে এলপি গ্যাসের সংকট চলছে। কারণ এলসি খুলতে না পারায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। বসুন্ধরার সেলস ভলিউম এরই মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এলসি করতে না পারলে সামনে পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ হবে বলে জানান তিনি।
এলপিজি কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে এলপিজির কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে না পারায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
১২ কেজির সিলিন্ডার ছাড়াও সাড়ে ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সব সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। তবে সরকারি পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দামের পরিবর্তন হয়নি।
বিইআরসি জানায়, ডিসেম্বর মাসের জন্য সৌদি আরামকোর প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) যথাক্রমে প্রতি টন ৬৫০ মার্কিন ডলার এবং ৬৫০ মার্কিন ডলার ছিল। এটি জানুয়ারি মাসে কমে যথাক্রমে ৫৯০ এবং ৬০৯ ডলার হয়েছিল। এবার তা আবারও বেড়ে প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) ৭৯০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বেসরকারি এলপিজির রিটেইলার পয়েন্টে ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজি ১২৮.৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হলো। এ ছাড়া রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহ করা বেসরকারি এলপিজির ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজি ১২১ দশমিক ৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের কাঁচামাল প্রোপেন ও বিউটেনের দাম প্রতি মাসে কমছে। গত মাসেও পণ্য দুটির টনপ্রতি দাম কমেছে গড়ে ৬০ ডলারের মতো। অপারেটররা জানায়, বিশ্ববাজারে এলপি গ্যাসের কাঁচামালের দাম পড়তির দিকে, পণ্যও পর্যাপ্ত। শুধু এলসি জটিলতার কারণে বাংলাদেশি আমদানিকারকরা এটি আমদানি করতে পারছেন না।
দেশব্যাপী এলপি গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৫০ লাখ। ২৬টি বেসরকারি কোম্পানি এসব গ্যাস বাজারজাত করে। ডলার সংকটে পণ্য আমদানিতে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারায় বেশিরভাগ কোম্পানি ব্যবসায়িকভাবে লোকসানে পড়েছে। এরই মধ্যে সব কোম্পানির বিপণন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।
দেশের বাজারে ৩২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে এলপি গ্যাস ব্যবসায়ীদের। প্রতিবছর ১৪ লাখ টনের মতো এলপি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। পাইপলাইনের গ্যাস সংকটে বাসাবাড়িতে জনপ্রিয় হওয়া এ পণ্য এখন গাড়িতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। শিল্প মালিকরা বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার শুরু করেছেন। বৃহৎ এ বাজার ধরে রাখার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান ব্যবসায়ীরা।