নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলার সংকটের কারণে যেখানে পুরো বস্ত্র খাতসহ অন্যান্য সকল খাতেই নেমে এসেছে ধ্বস। কমেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর মুনাফাও। সেখানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হাওয়েল টেক্সটাইল যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি প্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। অথচ একই খাতের অন্য কোম্পানিগুলো ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায় বড় ধ্বস নেমেছে।
আসলেই কি কোম্পানিটির এমন মুনাফা বেড়েছে, নাকি শেয়ারদর বৃদ্ধির জন্য এমন আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এমনই আলোচনা চলছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, কোম্পানিটির ইপিএস বাড়িয়ে দেখানোর কারণে শেয়ারের বিপরীতে বেশি মার্জিন ঋণ নিতে সহজ হয়। এতে করে মার্জিন ঋণের বিপরীতে শেয়ার কিনে বাজারের কোম্পানিটির শেয়ারের সংকট তৈরী করা যায়। আর কোনো কোম্পানির শেয়ারের সংকট তৈরী হলেই বাজারে ওই কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়।
হাওয়েল টেক্সটাইলের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর থেকেই বেড়ে চলেছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। গেলো সপ্তাহে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ রিটার্ণ দিয়েছে। আজ রোববার ডিএসইর দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষ স্থান দখল করেছে। এছাড়াও আজ দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের কোনো বিক্রেতা ছিল না। যার কারণে আজ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দরে।
আজ কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৪ টাকা ৮০ পয়সা বা ৯.৯৮ শতাংশ। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৪৮ টাকা ১০ পয়সা। আজ ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ৫২ টাকা ৯০ পয়সায়।
সর্বশেষ দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২২) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৪৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৭৬ পয়সা। দুই প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর’২২) শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ০৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১ টাকা ৭৪ পয়সা।
অন্যদিকে, একই খাতের কোম্পানি স্কয়ার টেক্সটাইলের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অক্টোবর-ডিসেম্বর’২২) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯২ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ২ টাকা ৩৮ পয়সা। দুই প্রান্তিকে (জুলাই-ডিসেম্বর’২২) শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৮২ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৬৮ পয়সা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, স্কয়ার টেক্সটাইলের মুনাফা কমলেও বেড়েছে হাওয়েল টেক্সটাইলের। শুধু স্কয়ার টেক্সটাইল নয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বেশিরভাগ বস্ত্র কোম্পানির মুনাফা কমেছে। কোম্পানিগুলো বলছে ডলার সংকটে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কাচাঁ মালের দর বৃদ্ধির কারণে বেশি দামে কাচাঁমাল কিনে আগে থেকে অর্ডার নেওয়া কম দামে পণ্য পাঠানোর কারণে মুনাফায় ধ্বস নেমেছে কোম্পানিগুলোর।
তাহলে কিসের ভিত্তিতে হাওয়েল টেক্সটাইলের মুনাফা বেড়েছে জানতে চাইলে কোম্পানিটির সচিব দেবরত শাহ শেয়ারনিউজকে বলেন, ডলার সংকটের আগেই বিদেশিদের অর্ডার নেওয়ার কারণে আগে থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাচাঁমাল অর্ডার করা হয়েছিল। এতে করে ডলারের বেশি দামের সময়েও কম দামে কেনা কাচাঁমাল দিয়ে তৈরী পন্য ডলারের বেশি দামেন সময় রপ্তানী করেছি। এতে করে হাওয়েল টেক্সটাইল ডলারের বিপরীতে ক্যাশ গেইন করেছে। তা রিয়েলাইজ করার কারণে মুনাফা বেড়েছে।
তবে ডলার সংকটের কারণে চলতি প্রান্তিকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কোম্পানিটি। এতে করে তৃতীয় প্রান্তিকে আয় কমবে বলে মনে করছেন কোম্পানিটির সচিব।
কিন্তু হাওয়েল টেক্সটাইলের মতোই অন্য কোম্পানিগুলোও আগে থেকেই কাচাঁমাল আমদানি করে। কিন্তু ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে কাচাঁমাল আনতে এবং তৈরী পণ্য পাঠাতে বহন খরচ হিসেবে গুণতে হয়েছে বেশি অর্থ। যার কারণে অন্য কোম্পানিগুলোর মুনাফায় প্রভাব পড়েছে। কিন্তু হাওয়েল টেক্সটাইল তার সম্পন্ন বিপরীতে। তাহলে কি হা ওয়েল টেক্সটাই বস্ত্র খাতের আলাউদ্দিনের চেরাগ। প্রশ্ন সাধারণ বিনিয়োগকারদের।