নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন মন্দা শেয়ারবাজারে কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হলেও বিষয়টি নজরেই নিচ্ছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরমধ্যে থাকা সী পার্ল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার শেয়ার গত আগস্ট মাস থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কোনো সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়লেও ডিএসই ও বিএসইসি এই বিষয়ে নিরবতা পালন করছে।
৬ মাসের কম সময়ের মধ্যে ৪৪ টাকা থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর ২৫৬ টাকা বা ৫৮১ শতাংশ বেড়ে ৩০০ টাকায় লেনদেন হওয়ার পর জানা গেছে আরেকটি কোম্পানির অংশীদারত্ব কিনছে সী পার্ল কর্তৃপক্ষ। আর কোম্পানিটির এমন অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগকারীদের কোন প্রকার সতর্ক করেনি স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। অথচ অন্য কোনো কোম্পানির শেয়ার দর ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেই বার বার সতর্কবার্তা দিতে থাকে স্টক এক্সচেঞ্জটির কর্তৃপক্ষ।
কোম্পানিটির শেয়ার কোনো হাউজ থেকে লেনদেন করা হচ্ছে অথবা কোন কোন হাউজ নিজেদের অ্যাকাউন্টে শেয়ার কিনে কারসাজি চক্রকে সহায়তা করছে তা বিএসইসি সার্ভেলেন্স ডিপার্টম্যান্ট থেকে জানতে পারে। কিন্তু এতোসব তথ্য জেনেও কোম্পানিটির শেয়ারের এমন অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধিতেও বরাবরই নিরব বিএসইসি।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, তাহলে কি সী পার্লের শেয়ার কারসাজির ক্ষেত্রে ডিএসই এবং বিএসইসির সমর্থন রয়েছে। যদি তাই না হয়, তাহলে কোম্পানিটির এমন অস্বাভাবিক শেয়ার দর বৃদ্ধির কারণে কমপক্ষে বিনিয়োগকারীদেরকে ডিএসই সতর্ক করতে পারতো।
সর্বশেষ (জুলাই- ডিসেম্বর’২২) দুই প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা। যেখানে আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৭২ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলোনায় কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ২ টাকা ৭৮ পয়সা বা ৩৮৬ শতাংশ। হোটেল ব্যবসায় হঠাৎ এমন মুনাফাকেও অস্বাভাবিক বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানিটির শেয়ার দর বৃদ্ধির জন্যই এমন অস্বাভাকি মুনাফা দেখানো হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
হঠাৎ হোটেল ব্যবসা এত ভালো হয়ে উঠেনি যে, সী পার্লের শেয়ার দর ৪৪ টাকা থেকে ৩০০ টাকা হতে হবে। কোনো প্রকার অদৃশ্য শক্তি এই কোম্পানিটির পেছনে কাজ করছে বলে কোম্পানিটির শেয়ারদর এমন অস্বাভাকি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিটির এমন অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ ক্ষতিয়ে দেখলেই সঠিত তথ্য সামনে আসবে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।
বিডি ওয়েল্ডিংয়ে মালিকানা:
সম্প্রতি সি পার্লকে বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডসের (বিডি ওয়েল্ডিং) ৩০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। উৎপাদন বন্ধ ও বিগত ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘জেড’ক্যাটাগরিতে লেনদেন করা বিডি ওয়েল্ডিংয়ের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে বর্তমানে ৩১.০১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ২৫.২৫ শতাংশ শেয়ার আইসিবির কাছে রয়েছে। ৩০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের জন্য আইসিবির কাছে থাকা সব শেয়ার সি পার্লের কাছে বিক্রি করে দেয়া হবে। বাকি ৪.৭৫ শতাংশ শেয়ার এমডি ও পরিচালকদের কাছ থেকে বিক্রি করা হবে।
শেয়ারবাজারে অন্যতম দুর্বল মৌলের কোম্পানি হিসাবে পরিচিত বিডি ওয়েল্ডেংয়ের শেয়ার সরাসরি সি পার্ল অধিগ্রহণ করছে না। এর অংশীদারত্ব কিনছেন সী পার্লের পরিচালক ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, তার ভাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুল হক শামীম ও ভাতিজা সামিউল হক সাফা।
সী পার্ল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। এরপর ২০২০ সালে ১ শতাংশ ক্যাশ, ২০২১ সালে ১ শতাংশ ক্যাশ এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে শেয়ার দরে অস্বাভাবিক উল্লম্ফনের পর ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।
মুনাফার দিক থেকে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৪৪ পয়সা। এরপরের বছর লোকসান হয়েছে ০৯ পয়সা। ২০২১ সালে ইপিএস হয়েছে ৬১ পয়সা। তারপর শেয়ার দরে তেজিভাব দেখা দেওয়ার পর মুনাফা দেখানো হয় ১ টাকা ৩৪ পয়সা। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ ৬ মাসে কোম্পানিটির ইপিএস দেখানো হয়েছে ৩ টাকা ৫০ পয়সা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭২ পয়সা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারটি নিয়ে কারসাজিকারিদের সহযোগিতা করতেই কোম্পানিটির মুনাফা অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থার খতিয়ে দেখা জরুরী বলে তাঁরা মনে করেন।