নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশের বাজার ধরতে প্রায় ৯০ হাজার কোটি রুপির বিনিয়োগ আনার পরিকল্পনা করেছে। বিনিয়োগের বিষয়ে সরকারের সম্মতি পাওয়ার আগে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক নাম প্রচার করতে চাইছে না তারা।
ওই গোষ্ঠীর ভারতীয় প্রতিনিধি রাজিবনাথ রায় জানিয়েছেন, প্রথমে তারা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাবের ‘ব্লু প্রিন্ট’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাতে চান। এ বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মেইল পাঠিয়ে সাক্ষাতের সুযোগ চেয়েছেন। যদি তারা সাক্ষাতের সুযোগ পান, তখন তারা তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনাটির বিস্তারিত প্রকাশ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যে মেইল পাঠানো হয়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত প্রতিবেদনের ‘বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় কোম্পানির সম্ভাবনা’ অংশে ‘পতঞ্জলি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশে ‘পতঞ্জলি’র উৎপাদিত হেলথ কেয়ার ও স্কিন কেয়ার পণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে স্কিন কেয়ার মার্কেটের আকার ছিল প্রায় ১.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৭ সালে বেড়ে ২.১২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে।
প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসা সেবা নিতে বিদেশে যায়, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা না থাকার কারণে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আয়ুর্বেদিক হাসপাতাল বা চিকিৎসাব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করে স্বাস্থ্যসেবার ৫ শতাংশ ধরতে পারলেও মার্কেট শেয়ারের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় ‘পতঞ্জলি’ তার উৎপাদিত আয়ুর্বেদিক ওষুধসামগ্রী, নেচারাল হেলথ কেয়ার, প্রাকৃতিক ও ভেষজ পণ্য, বিউটি ও স্কিন কেয়ার পণ্য এবং গৃহস্থালি ভোগ্যপণ্য দিয়ে এই মার্কেট শেয়ারটি ধরতে পারে বলে মেইলের সঙ্গে যুক্ত ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তবে রাজিবনাথ অবশ্য ‘পতঞ্জলি’র বিষয়টি স্বীকার করেননি।
রাজিবনাথ বলেন, আমি ‘পতঞ্জলি’র প্রতিনিধি নই বা ওই কোম্পানিটির নামও স্বীকার করছি না। আমরা যে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে কথা বলছি, সেখানে ভারতীয় কোম্পানি ছাড়াও আরও অনেক কোম্পানি (জয়েন্ট ভেঞ্চার) থাকতে পারে। ভারতীয় বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো মেইলে যে ৩ জনের নাম উল্লেখ আছে তাদের মধ্যে দুজন ভারতীয় এবং অপরজন বাংলাদেশি। দুই ভারতীয় হচ্ছেন রাজা মুখার্জি ও রাজিবনাথ রায়। বাংলাদেশি সুজন সরকার সবুজ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো মেইলে তারা নিজেদের ‘বিদেশি ও আন্তসীমান্ত বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। মেইলে সংযুক্ত মোবাইল নম্বরে বাংলাদেশি প্রতিনিধি সুজন সরকার সবুজের সঙ্গে শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি ১০ মিনিট পর এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান। আলোচ্য সময়ের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে যখন ফিরতি কল আসে, তখন ওপাশে যিনি কথা বলছিলেন- তিনি নিজেকে মেইলে উল্লিখিত তিনজনের একজন ‘রাজিবনাথ রায়’ বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি সম্ভাবনাময় বাজার, যেখানে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দ্রুতগতিতে মাথাপিছু আয় বেড়ে চলেছে। প্রায় ১৬ কোটি ভোক্তার বর্ধনশীল এই বাজারে তারা ভারতীয় বিনিয়োগ আনতে চান।
তিনি বলেন, যদি তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ আনতে পারেন এবং সেখানে কারখানা স্থাপন হয়, তবে ওই কারখানায় উৎপাদিত পণ্য ভারতের সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিম বাংলা এমনকি উড়িষ্যায় রপ্তানির বিষয়টিও তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমতি দিলে তারা ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে ৯০ হাজার কোটি রুপির বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন। এটি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), যৌথ বিনিয়োগ এবং সরকারি- বেসরকারি বিনিয়োগ বা পিপিপি যে কোনোভাবেই আসতে পারে বলে জানান তিনি।