নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে। ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ১৬ কিলোমিটার উড়াল পথ ও পদ্মা সেতু পেরিয়ে ট্রেন পৌঁছাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন স্থাপিত হয়েছে। মাওয়া থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রেলপথের ২৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে সরাসরি রাজধানী থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন যাবে ভাঙ্গা স্টেশনে। এ পথে ট্রেন পরিচালনায় বিশেষ ইঞ্জিন-কোচ আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চীন থেকে আসতে শুরু করবে।
এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের কাজ চলছে। এটি হবে সবচেয়ে আধুনিক ও দ্রুতগতি সম্পন্ন রেলপথ। এ পথে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। আমরা এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করতে পারব। শুরুতে ৪ জোড়া ট্রেন পরিচালনা করব। পুরো প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হবে। ফলে ২৩টি জেলা নতুন করে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে এ প্রকল্প রেল ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ পথেই দেশে প্রথম ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন বলেন, ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত লাইন স্থাপন পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। স্টেশনগুলো প্রস্তুত। পুরো প্রকল্পের লেভেলক্রসিং আন্ডারপাস করা হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই। যথাযথ গতিতে স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। মাওয়া থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
গণপরিবহণ হিসাবে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে রেলওয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। বর্তমানে দেশে ৩ হাজার ৯৯ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আরও ৮১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ যুক্ত হচ্ছে। এ পথে অত্যাধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থাও চালু হচ্ছে। সব লেভেলক্রসিং হবে আন্ডারপাস। রেলে এই প্রথম লাইনের ওপর লেভেলক্রসিংবিহীন প্রকল্প নির্মাণ হচ্ছে। যার ফলে এ পথে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। পদ্মা সেতু ও উড়াল পথে পাথরবিহীন রেললাইন বসানো হয়েছে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা এবং ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে সরাসরি যশোর যাবে ট্রেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো লাইন স্থাপন হলে এ পথে মোট ৮ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হবে। ট্রেন ভাড়া, চলমান আন্তঃনগর ট্রেনের মতোই হবে। তবে ট্রেন যখন পদ্মা সেতু পার হবে, তখন যাত্রীদের টিকিটের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা যোগ হবে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্র বলছে, আগামী জুনের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী অধিকাংশ কোচ রেলবহরে যুক্ত হবে। কোচগুলোর অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা (ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন) বেশ আধুনিক। আরামদায়ক আসনগুলোতে থাকছে ফোল্ডিং ব্যবস্থা। থাকবে ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থাও। এ ছাড়া ডিজিটাল মনিটর ও ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) থাকছে প্রতিটি কোচে। কোচের ওয়াশরুমগুলোও হবে পরিবেশবান্ধব। এছাড়া কোচের উভয় প্রান্তে হাই এবং লো-কমোডের ব্যবস্থা থাকবে।