নিজস্ব প্রতিবেদক: জনপ্রিয় টেলিভিশন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'ইতাদি'র প্রতিটি পর্বেই দাদা-দাদি ও নাতি-নাতনির মধ্যকার মিষ্টি আলাপ দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। টম অ্যান্ড জেরির মতো এই জুটি তর্ক-বিতর্কে দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। নানীর জনপ্রিয় মুখ অভিনেত্রী শবনম পারভীন এখন প্রতারণা মামলার আসামি। তাকে নিয়মিত ঢাকার আদালতে হাজিরা দিতে হয়।
২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর শবনম পারভীনের বিরুদ্ধে কিংস কনফেকশনারি (বাংলাদেশ) পিটিই লিমিটেডের পক্ষ থেকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম মিয়া বাড়ি ভাড়া চুক্তির মাধ্যমে অগ্রিম টাকা নেওয়ার অভিযোগে এবং তা ফেরত দেওয়ার হুমকির অভিযোগে মামলা করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। এরপর শবনম আদালতে আত্মসমর্পণ হয়ে জামিন পান।
এরপর ২০২০ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শবনম পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারের নির্দেশ দেন। বিচার চলাকালে বাদীসহ তিনজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বিচারবঞ্চিত হওয়ার অভিযোগে মামলা হস্তান্তরের আবেদন করেন শবনম পারভীন।
আগামী ৩০ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালতে এই বিষয়ে শুনানি হবে।
তবে আসামিপক্ষের পক্ষ থেকে সমঝোতার কথা বলা হলেও তা করা হয়নি বলে জানান বাদীর আইনজীবী।
এই বিষয়ে শবনম পারভীন আদালতে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সাংবাদিকদের ডাকিনি। আপনি এখানে কেন এসেছেন?
মামলার বাদীর আইনজীবী আশরাফ হোসেন বলেন, আসামি শবনম পারভীন বাড়ি ভাড়া চুক্তির মাধ্যমে অগ্রিম টাকা নেওয়ার এবং ফেরত না দেওয়ার হুমকি দেয়। আমরা প্রতিকারের জন্য মামলা করেছি। আদালত মামলাটি আমলে নেয়।
তিনি বলেন, মামলার বিচারও শুরু হয়েছে। তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যও নেওয়া হয়েছে। শবনম পারভীন আপস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। আগামী ৩০ মার্চ মামলাটি স্থানান্তর চেয়ে আসামিপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি হবে।
শবনম পারভীনের স্বামীর নাম শিমুল আহমেদ। শবনম পারভীন রাজধানীর উত্তরা-পশ্চিম থানার অন্তর্গত উত্তরা মডেল টাউন এলাকার ৪১ নম্বর রোড, ১২ নম্বর সেক্টরের বাড়ির মালিক। এই বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে চুক্তির মাধ্যমে অগ্রিম টাকা ফেরত না পাওয়ায় জটিলতা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কিংস কনফেকশনারি (বাংলাদেশ) পিটিই লিমিটেড ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ২০১১ সালের ১৯ মার্চ শবনম পারভীনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম জামানত নিয়ে বাড়িটি ভাড়া নেয়। পরে শবনম পারভীনকে ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি লিখিত নোটিশের মাধ্যমে চুক্তির শর্তানুযায়ী কোম্পানির অফিস পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে বাড়ি ছাড়ার কথা জানানো হয়। নিয়মিত মাসিক ভাড়া পরিশোধ করার পর ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল কিংস কনফেকশনারি অফিস খালি করে দেন
ভাড়ার চুক্তি অনুসারে, মাসিক ভাড়ার জন্য জামানত থেকে ১০ হাজার কেটে নেওয়া হয়েছিল। শবনম পারভীন মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেন যে বাদী বাড়ি ছাড়ার সময় অবশিষ্ট টাকা ফেরত দিতে চাইলে অন্য ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন। তার কথা মতো প্রতিষ্ঠানটি বাসা ছেড়ে অফিস পরিবর্তন করে।
এরপর বাদী সংগঠনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময়ে বকেয়া টাকা ফেরত দাবি করলে আসামি বিভিন্ন অজুহাতে সময় নষ্ট করেন। বাদী বিবাদীকে টাকা ফেরতের জন্য একাধিক নোটিশ দেন। প্রতিবার বিবাদী নোটিশ গ্রহণ না করায় এটি ফিরে আসে।
চুক্তি মোতাবেক বাদী প্রতিষ্ঠানের ১৫ লাখ টাকার অগ্রিম জামানত থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে ৩৬ মাসে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা কেটে নেয় বিবাদী। এরপর বিবাদীর কাছে বকেয়া ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ফেরত দিতে ১০ অক্টোবর ২০১৯ আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।
কিন্তু আসামিরা তা গ্রহণ না করায় তিন দিন পর নোটিশ ফেরত দেওয়া হয়। বাদীর অভিযোগ, আসামী বকেয়া টাকা না দিয়ে তর্ক করে সময় নষ্ট করছে এবং বকেয়া টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছে।
এই ঘটনায় ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর দণ্ডবিধি ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কিংস কনফেকশনারি (বাংলাদেশ) পিটিই লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম মিয়া বাদী হয়ে শবনম পারভীনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।