নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন অভিভাবককে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্যকরা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাসহ অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এই তথ্য জানান।
জানা গেছে, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিয়মানুসারে পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে। কিছুদিন আগে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সোমবার শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল তার। জজের মেয়ে হওয়ায় সে ঝাড়ু দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এই নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ায়।
ওই রাতে ফেসবুকে সহপাঠীদের বস্তির মেয়ে ও তার মা জজ উল্লেখ করে সে পোস্ট দেয়। এছাড়া সহপাঠীদের মাকে তার মায়ের মতো জজ হতে বলে।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে ওই ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডাকতে বলেন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে চার ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনের কক্ষে যান। এই সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জজ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও জেলে পাঠানোর হুমকি-ধমকি দেন। দুই অভিভাবককে তার পা ধরে ক্ষমা চাইতে তিনি বাধ্য করেন।
তবে শিক্ষকদের দাবি, জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ায় দুই অভিভাবক ভয়ে জজের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছেন। পা ধরতে তাদের কেউ বাধ্য করেনি।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিকাল ৩টার দিকে ক্লাস বর্জন করে তারা স্কুলের সামনে নওয়াববাড়ি সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। দু’দফায় রাত ৮টা পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে যান। এই সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী ও প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। পরে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, হাইকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় ঘটনাটি জেনেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যায়।
প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন জানান, শিক্ষার্থীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি থেকে ঘটনাটি ঘটেছে। সোমবার জজের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা ছিল। প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও পরে সে কাজটি করেছে। এই সময় অন্যরা তাকে কটূক্তি করে। এই নিয়ে বাগবিতণ্ডা ও দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
এমন পরিস্থিতিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে স্কুলে ডাকা হয়েছিল। এই সময় ভয় পেয়ে দুজন অভিভাবক জজের পা ধরে মাফ চান। তবে এই কাজে তাদের কেউ বাধ্য করেনি। অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিনের বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।