নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য অভিন্ন তিস্তা নদীর বিষয়ে ভারবাল নোটের জবাবের অপেক্ষায় আছে নয়াদিল্লির কাছ থেকে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন বৃহস্পতিবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ে সাপ্তাহিক ব্রিফিংকালে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমরা এখনো কোনো জবাব পাইনি। উত্তর পাওয়ার পর আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’ খবর বাসসের।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিস্তায় প্রবাহ হ্রাস করার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর ব্যাখ্যা চেয়ে বাংলাদেশ নয়াদিল্লিতে নোট ভারবাল পাঠিয়েছে। এর কয়েক দিন পর মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ মন্তব্য করেছেন।
সাবরিন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে পানির প্রবাহ হ্রাসের বিষয়ে ভারবাল নোটটি পাঠিয়েছে এবং আন্তঃসীমান্ত অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের জন্য দীর্ঘ প্রত্যাশিত চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশের বিশেষ আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘের পানি সম্মেলনে ঢাকা আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি উত্থাপন করেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাবরিন জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ পানিসম্পদের টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে দেশের জাতীয় নীতি তুলে ধরেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে আলোচনায় রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকা ও নয়াদিল্লি তিস্তা চুক্তিটি স্বাক্ষর করার জন্য নির্ধারিত ছিল। তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরও তার সফরসঙ্গী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি চুক্তির বিরোধিতা করে শেষ মুহূর্তে সফরসঙ্গী হওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
চুক্তি না হওয়ায় হতাশা সঞ্চারিত হয় এবং সে সময়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর আশানুরূপ হয়নি। ভারত ও বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হলেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতার কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি।
সাম্প্রতিক ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় সেচের উদ্দেশ্যে তিস্তার পানি সরানোর জন্য দুটি নতুন খাল খননের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তার পানি ব্যবহার করে দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে, যা বাংলাদেশের ভাটির দিকে পানিপ্রবাহকে প্রভাবিত করবে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নয়াদিল্লির সঙ্গে যে কোনো বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা আগের মেয়াদে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দূর করে গঙ্গার পানি বণ্টনের বিষয়ে একটি যুগান্তকারী ৩০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। তখন নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দেবগৌড়া এবং জ্যোতি বসু তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ওই চুক্তিটি শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গা নদীতে ন্যূনতম পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করেছিল।