নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন যাবত মন্দাভাব ঝেঁকে বসেছে। যার ফলে বিনিয়োগকারীরা ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ছেন। যা বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিদায়ী সপ্তাহে চার কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে পড়েছে। এতে শেয়ার চারটির বিনিয়োগকারীরা চোখেসর্সে ফুল দেখছেন। শেয়ার ৪টি হলো-বেঙ্গল উইন্ডশোর, রূপালী লাইফ, মেঘনা লাইফ ও অরিয়ন ইনফিউশন।
কোম্পানি চারটির মধ্যে রূপালী লাইফ ও মেঘনা লাইফের শেয়ার দর হঠাৎ করে উল্লম্ফন ঘটিয়ে বিদায়ী সপ্তাহে বিপর্যয় ঘটনো হয়েছে। বেঙ্গল উইন্ডশোর শেয়ার ধীরে ধীরে ওপরে তুলে বিদায় সপ্তাহে এক চুটে তলানিতে নামানো হয়েছে। আর ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার গত চার মাস যাবত প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে। এর আগে নানা রকম গুঞ্জন ছড়িয়ে শেয়ারটির দর এক হাজার টাকায় তোলা হয়েছে। তারপর ক্রমাগত পতন। চার মাসে ক্রমাগত পতন ঘটিয়ে এক হাজার শেয়ার এখন ২৬৫ টাকায় নামানো হয়েছে।
কোম্পানি চারটির মধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে বেঙ্গল উইন্ডশোরের দর কমেছে ২৫.৩২ শতাংশ, রূপালী লাইফের ১৫.৪৬ শতাংশ, মেঘনা লাইফের ১০.৫৫ শতাংশ এবং অরিয়ন ইনফিউশনের ৮.৯৩ শতাংশ।
বেঙ্গল উইন্ডশোর:
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৩৯ টাকা ১০ পয়সা। শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ২৯ টাকা ২০ পয়সা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারটির দর কমেছে ৯ টাকা ৯০ পয়সা বা ২৫.৩২ শতাংশ।
আগের সপ্তাহে শেয়ারটির দর ছিল ৪২ টাকার ওপরে। তিন মাস আগে শেয়ারটির দর ২৮ টাকা থেকে ধীরে ধীরে দর বাড়িয়ে ৪২ টাকার ওপরে তোলা হয়েছে। গত সপ্তাহে শেয়ারটি বিক্রিতে বড় আকারে চাপ দেওয়া হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ারটির দরে অস্বাভাবিক পতন ঘটানো হয়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটি ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
রূপালী লাইফ:
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ১০৬ টাকা ১০ পয়সা। শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৮৯ টাকা ৭০ পয়সা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারটির দর কমেছে ১৬ টাকা ৪০ পয়সা বা ১৫.৪৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে শেয়ারটির দর ১২৪ টাকায় তোলা হয়েছিল। যদিও সপ্তাহে ক্লোজিং দর হয়েছে ১১৮ টাকা ৬০ পয়সায়।
দুই সপ্তাহ আগে শেয়ারটির দর ছিল ৮৬ টাকা। বিনা কারণে শেয়ারটির দর আকাশচুম্বী করে গত সপ্তাহে হঠাৎ অস্বাভাবিক পতন ঘটানো হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বোচ্চ ছিল ১২৪ টাকা (১৪ মার্চ, ২০২৩) এবং সর্বনিম্ন ৬১ টাকা ৩০ পয়সা (২৮ জুলাই)। সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটি ১৮ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
মেঘনা লাইফ:
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ৮৫ টাকা ৩০ পয়সা। শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ৭৬ টাকা ৩০ পয়সা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারটির দর কমেছে ৯ টাকা বা ১০.৫৫ শতাংশ।
আগের সপ্তাহে শেয়ারটির দর ছিল ৯৫ টাকার ওপরে। তিন সপ্তাহে আগের শেয়ারটির দর ৭৬ টাকা থেকে ৯৫ টাকায় তোলা হয়। কিন্তু গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে অস্বাভাবিক পতন ঘটানো হয়। তারপর দর কিছুটা তুলে বিদায়ী সপ্তাহের শেষদিকে ফের পতন ঘটানো হয়। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বোচ্চ ছিল ৯৫ টাকা (১৪ মার্চ, ২০২৩) এবং সর্বনিম্ন ৬২ টাকা ২০ পয়সা (২২ ডিসেম্বর)। সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটি ১৮ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।
অরিয়ন ইনফিউশন:
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির উদ্বোধনী দর ছিল ২৯১ টাকা ২০ পয়সা। শেষ কার্যদিবসে ক্লোজিং দর হয়েছে ২৬৫ টাকা ১০ পয়সা। সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারটির দর কমেছে ২৬ টাকা ১০ পয়সা বা ৮.৯৩ শতাংশ।
গত কয়েক সপ্তাহ যাবত শেয়ারটি সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এর আগে গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে শেয়ারটির দর ছিল ১০০ টাকার নিচে। তারপর ইপিএস ও ডিভিডেন্ডে চমক আসার গুঞ্জন ছড়িয়ে শেয়ারটির দর টানা তোলা হয়। চার মাসের কম সময়ে শেয়ারটির দর ২৭ অক্টোবর এক হাজার টাকায় তোলা হয়। ওইদিন লেনদেন শেষে ক্লোজিং দর হয় ৯৭৩ টাকা ৯০ পয়সায়। যা কোম্পানিটির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর সর্বোচ্চ দর।
এরপর টানা পতন। চার মাসের মধ্যে শেয়ারটির দর ২৬৫ টাকায় নামানো হয়। এখন শেয়ারটি এক সপ্তাহে তোলা হলে পরের সপ্তাহেই নামানো হয়। শেয়ারটি নিয়ে এখন চলছে টম এন্ড জেরির খেলা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি ফের সংগ্রহ করছে। যার ফলে শেয়ারটির দরে অস্থিরতা চলছে। শেয়ারটি একটি স্বল্প মূলধনী কোম্পানি। এর মূলধন বাড়ানোর জন্য রাইট শেয়ার ইস্যু করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও বাজারে গুঞ্জন রয়েছে।
সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটি ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। যা আগের দুই বছরে ছিল ১০ শতাংশ করে ক্যাশ। সর্বশেষ বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ২ টাকা ১০ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ১ টাকা ৩৭ পয়সা।