নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন যাবত পতন অব্যাহত রয়েছে। সূচক একদিন সামান্য পরিমাণ বাড়লেই পরের তিন দিন টানা পতনে থাকে। তারপরও বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বেধেছিল, রমজান মাসে বাজার ভালো হবে। কিন্তু রমজানের প্রথম কার্যদিবসেই তাদের সেই স্বপ্ন হোছট খেল।
এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছিলেন, মার্চ মাসে দেশের শেয়ারবাজারে সুখবর আসবে। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ডকে এক্সপোজার লিমিটেড বাইরে রাখবে। এর ফলে ব্যাংকগুলো নতুন করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। এছাড়া, মার্চ মাস থেকে ব্যাংকগুলো ভালো ডিভিডেন্ড দিবে। এখানেও ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সক্ষমতা বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে মার্চ মাস থেকে শেয়ারবাজার ভালো হবে।
তখন থেকেই বিনিয়োগকারীরা আশা নিয়ে দিন অতিবাহিত করতে থাকে। প্রতিদিনই ভাবে আজ বাজার ভালো হবে। কিন্তু দিনশেষে তাদের সেই আশায় গুড়েবালি দেখা যায়। সবশেষ রমজান মাসের আগের দিন বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) শেয়ারবাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আভাস মিলে। সেদিন দেশের উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকে। যে কারণে তারা বড় প্রত্যাশা নিয়ে রমজানের প্রথম কার্যদিবস আজ সোমবার শেয়ারবাজারে আসে। আজ বাজার শুরুও হয়েছিল উত্থান প্রবণতা দিয়ে। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। পৌনে এক ঘন্টার মধ্যেই সেল প্রেসারে বাজার নেতিবাচক প্রবণতায় মোড় নেয়। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত আরও ঘনীভূত হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে এখন প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা এখন বাজার থেকে যোজন যোজন দুরে অবস্থান করছে। যদিও বিএসইসি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে এর আগে কার্পন্য করেনি। তারপরও তারা বাজারের ক্রান্তিকালে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। এখন যা লেনদেন হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই করছে। তাদের বেশিরভাগই নিটিং করছে। অথবা এক শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ার কিনছে। বাজারে তাদের নতুন বিনিয়োগ করার সক্ষমতা নেই। নতুন বিনিয়োগ না থাকায় বাজার ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরতে পারছে না।
বিএসইসি’র একটি কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। আমাদের বাজার এখন একটি গোষ্টির নিয়ন্ত্রণে। তারা বাজারকে উঠতে দিতে চায় না। কারণ তারা আগে থেকেই সব শেয়ার বিক্রি করে শিকারী বাঘের মতো বসে আছে। কখন কম দরে শেয়ার কিনতে পারে। যে কারণে তারা ফ্লোর প্রাইস তোলার জন্য অনবরত চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএসইসি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থই বেশি দেখে। যে কারণে ফ্লোর প্রাইস তোলার ক্ষেত্রে অনড় ভূমিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, কতিপয় লোকের সুবিধার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারীর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে পারে না। তিনি দাবি করেন, স্বার্থান্বেষী ওই দুষ্টু লোকদের কারণেই বাজার স্বাভাবিক হতে পারছে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সব মন্দেরই শেষ থাকে। শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থারও শেষ হবে। সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয়। তিনি বলেন, বন্ড এক্সপোজারের বিষয়টি বর্তমানে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে বিবেচনাধীন। এটি অনুমোদন হলে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর সক্রিয় হওয়ার বড় সুযোগ তৈরি হবে।