নিজস্ব প্রতিবেদক: পুরান ঢাকার বাহারি খাবারের কথা সর্বজনবিদিত। বিরিয়ানি, কাবুলি, খিচুড়ি, হালিম, বাকরখানি, রুটি, কাবাব, শরবত, দোলমাজাতীয় তরকারিসহ জিভে জল আনা এসব খাবারের জন্য খাদ্যরসিকদের পছন্দ পুরান ঢাকা। স্বাদে, গন্ধে ও গুণগতমানে কোনটিই কোনটির চেয়ে কম নয়। এসব খাবারের জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে গেছে দেশের গণ্ডিও।
পুরান ঢাকার ভোজনরসিকদের কাছে কাচ্চিই প্রধান আকর্ষণ, যা খাবারে ভরপুর। তাই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড, নাজিমউদ্দিন রোড, উর্দু রোড, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, চকবাজার, নবাবপুর, ইসলামপুর, ওয়ারী, মালিটোলা ও মৌলভীবাজার এলাকার কাচ্চি বিরিয়ানির দোকানে ভিড় জমান খাদ্যরসিকরা।
পুরান ঢাকার সেরা ৫ বিরিয়ানি
ইতিহাস বলছে, বিভিন্ন খাবারের প্রতি মুঘলদের দুর্বলতা ছিল। বাংলায় মুঘল শাসনামলে পুরান ঢাকার মানুষের কাছে বিরিয়ানি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। যে ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। বিয়ে থেকে শুরু করে মুসলিম পার্টি, ঈদ, জন্মদিন কিংবা পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানে রান্নাঘর ব্যস্ত কাচ্চি তৈরিতে।
পুরান ঢাকার শতশত বিরিয়ানির দোকানের ভিড়ে পুরনো ও ভোজনরসিকদের প্রিয় ৫টি বিরিয়ানির খোঁজ জেনে নিন।
১. হাজীর বিরিয়ানি
পুরান ঢাকার বিরিয়ানি মানেই হাজীর বিরিয়ানি বিরিয়ানিপ্রেমীদের প্রথম পছন্দ। ১৯৩৯ সালে হাজী মোহাম্মদ হোসেন 'হাজী বিরিয়ানি' প্রতিষ্ঠা করেন। এক হাঁড়ি বিরিয়ানি দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে তার বিরিয়ানির স্বাদ ও গুণাগুণ ভালো হওয়ায় হাজির বিরিয়ানির নাম ছড়িয়ে পড়ে। তার নাতিরা এখন বংশ পরম্পরায় এই ব্যবসা চালাচ্ছেন। ঐতিহ্য ধরে রাখতে কাঁঠাল পাতা দিয়ে তৈরি প্লেটে পরিবেশন করা হয় হাজী বিরিয়ানি।
হাজীর খাসির মাংসের বিরিয়ানিতে ঘি/বাটার অয়েলের পরিবর্তে সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সম্পূর্ণ দেশীয় সব মসলা ব্যবহার করা হয় বলে স্বাদে গন্ধে আজও সবার কাছে প্রিয় এই হাজীর বিরিয়ানি।
নাজিরা বাজারের কাজী আলাউদ্দিন রোডে ৭০ নম্বর দোকানটি খোলা থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। প্রতি প্লেট বিরিয়ানির দাম ২০০ টাকা।
২. হাজী নান্না বিরিয়ানি
১৯৬২ সালের দিকে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজা এলাকায় বাবুর্চি নান্না মিয়া বিরিয়ানির দোকান চালু করেন। ধীরে ধীরে হাজী নান্না বিরিয়ানির খাসির কাচ্চি ভোজনরসিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখানে খাসির কাচ্চির পাশাপাশি মোরগ-পোলাও, খাসির বিরিয়ানি, খাসির রেজালা, ফিরনি, টিকিয়া ও বোরহানি পাওয়া যায়। বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা ব্যবসার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
বেচারাম দেউড়ির ৪১ নম্বর দোকানটি প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। হাফ প্লেট খাসির বিরিয়ানির দাম ১৭০ টাকা, ফুল প্লেট ৩৪০ টাকা। খাসির বিরিয়ানি এক বোল ৬৮০ টাকা। মোরগ পোলাও হাফ প্লেট ১৬০ টাকা। এখানে প্রতি মাসের ৫ তারিখে আস্ত মোরগের বিরিয়ানি বিক্রি হয়। প্রতি বোলের মূল্য ৩৭০ টাকা।
৩. হানিফ বিরিয়ানি
আলাউদ্দিন রোডে হাজীর বিরিয়ানির ঠিক বিপরীতেই গড়ে উঠেছে পুরান ঢাকার আরেকটি প্রসিদ্ধ বিরিয়ানির দোকান হানিফ বিরিয়ানি। ১৯৭৫ সালে পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ হানিফের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে এটি। ২০০৫ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে হাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি ব্যবসার হাল ধরেন। হানিফ বিরিয়ানির প্রধান আকর্ষণ কাচ্চি।
নাজিরা বাজারের কাজী আলাউদ্দিন রোডে ৩০ নম্বর দোকানটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রতি প্লেট বিরিয়ানির দাম ২০০ টাকা।
৩. শাহ্ সাহেবের বিরিয়ানি
১৯৬০ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে শাহ্ সাহেবের বিরিয়ানি। সময়ের সাথে জনপ্রিয়তা পাওয়া শাহ্ সাহেবের বিরিয়ানি খেতে হলে আপনাকে সকাল সকাল চকবাজার যেতে হবে। কারণ এই বিরিয়ানির শুধু সকালেই পাওয়া যায়। সকাল ৯টার মধ্যেই বিরিয়ানি শেষ হয়ে যায়।
বিরিয়ানির পাশাপাশি প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এখানে মোরগ পোলাও পাওয়া যায়। খুবই কম পরিমাণে মসলার ব্যবহার এদের বৈশিষ্ট্য। চকবাজার শাহি জামে মসজিদের ঠিক বিপরীতে ৬ নম্বর বণিক সমিতির গলি দিয়ে সোজা ঢুকে, হাতের বামেই শাহ্ সাহেবের।
৫. মাখন বিরিয়ানি
১৯৫০ সালে আব্দুল কাদের মিয়ার হাত ধরে মাখন বিরিয়ানির পথচলা শুরু হয়। স্বাদ ও পরিমাণের মিশেলে ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে মাখন বিরিয়ানি। আব্দুল কাদেরে পর ব্যবসার হাল ধরেন আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে হাজী মাখন। এখন তার সন্তানেরা ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
রায়সাহেব বাজারের নাসির উদ্দিন সরদার লেনের দোকানে দিনভর ক্রেতাদের ভিড় থাকে। এখানে হাফ প্লেট বিরিয়ানির দাম ১১০ টাকা, ফুল প্লেট ২৫০ টাকা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে।