নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
গত ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাবি লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে মেশিন অপারেটর পদে রানা এবং আব্দুল্লাহ আল মামুন লিমনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগে দুই প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লাখ করে মোট ১৬ লাখ টাকা নেন ছাত্রলীগের ৫ নেতা।
অভিযুক্তরা ছাত্রলীগের নেতারা হলেন- ঢাবি লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাজফুজুর রহমান ফাহাদ, সাধারণ সম্পাদক খবির হোসেন সুমন, হাজারিবাগ থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাহার, লেদার ইন্সটিটিউট ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত এবং সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হক রাসেল।
আবুল হাসনাত বাহার নিজ কার্যালয়ে রাহাত বাদে বাকী ৩ জনকে ভাগের ভাগ ৩ লাখ ২০ হাজার করে টাকা দেন। তবে রাহাতের টাকা বাহার নিজের কাছে রেখে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনষ্টিটিউট ছাত্রলীগের সভাপতি মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত। ক্ষুব্ধ রাহাতের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ানুল হক রাসেলের মধ্যকার ১ মিনিট ৮ সেকেন্ড কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
রেকর্ডে রাসেলের উদ্দেশ্যে রাহাতকে বলতে শোনা যায়, তোমাদের কী হইছে এখানে এটা আমাকে খুলে বলো তো। উত্তরে ওপাশ থেকে রাসেল বলেন, আমাকে বাহার ভাই ফোন দিয়েছিলেন। ফোন দিয়ে উনি আমাকে বলছেন, অফিসে আয়। সবাইকে ফোন দিয়ে উনি ডাকছেন। এরপর সবাই সেখানে যাওয়ার পর আপনাকে (রাহাত) ফোন দিয়েছিলেন উনি আপনাকে ফোন দেওয়ার পর উনি সেখানে টাকা ভাগ করেছেন।
কীভাবে টাকা ভাগ করা হয়েছে- রাহাতের এ প্রশ্নের জবাবে রাসেল বলেন, টাকা ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে রাহাত আবার জিজ্ঞাসা করেন, ১৬ লাখ টাকাই ৫ ভাগ করা কিনা, উত্তরে রাসেল বলেন, হ্যাঁ, ৫ ভাগ করছে। মানে সবাইকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আর আপনারটা বাহার ভাইয়ের কাছে রাখা আছে।
এরপর কাকে কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে সেটা বর্ণনা করে রাসেল বলেন, আমাকে (রাসেল), মাহফুজ ভাইকে, সুমন ভাইকে, আপনাকে (রাহাত) এবং বাহার ভাইও ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। রেকর্ডিংয়ের শেষের পর্যায়ে রাহাতকে বলতে শোনা যায়, আচ্ছা, ১৬ লাখকে ৫ ভাগ করলে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকাই তো হয়।
অভিযোগের বিষয়ে আবুল হাসনাত বাহার বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আর মাজফুজুর রহমান ফাহাদ বলেন, রাজনীতিতে অনেকেই অনেককে ফাসানোর চেষ্টা করে। এখানে এমনটাই হয়েছে হয়তো। আমি তো এখন পদে নেই। আমি কীভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করবো? আমি এ বিষয়ে জানি না। এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান খবির হোসেন সুমন।
মুইন মুহতাদিউল হক রাহাত বলেন, রেকর্ডটা শুনলে বোঝা যাবে যে, আমি নিয়োগ বাণিজ্য কিংবা টাকা ভাগাভাগির সঙ্গে জড়িত নই। এই ঘটনা শোনার পর আমি রাসেলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাই । রেকর্ডে পরিষ্কারভাবে বলাও আছে যে, তারা টাকা ৫ ভাগ করেছে। আমাকে না জানিয়ে সভাপতি হিসেবে আমার নামে নাকি তারা টাকা ভাগ করেছে। এটা আমি জানিও না আমার নামের ভাগের টাকাটা বাহার নিয়েছেন। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না। যদি জানতাম তাহলে আমি এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িতও হতাম না।
রেদোয়ানুল হক রাসেল বলেন, এই অভিযোগ সঠিক না। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে আমার নামে এ ধরনের কথা ছড়ানো হচ্ছে। রেকর্ডিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, রেকর্ডের ওই ব্যক্তি আমি নই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। লেদার ইনষ্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তার ফোনে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, বিষয়টা দুঃখজনক। আমি যতদূর শুনেছি, দক্ষ এবং যোগ্য লোকেরাই নিয়োগ পেয়েছে। এরপরও যদি কোনো ধরনের অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ঘটে থাকলে আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।