ঢাকা, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪
Sharenews24

প্রবাসী পিতা-পুত্রের এক মিলিয়ন ডলার ‘আত্মসাত’

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৭ ২২:১৭:৩৩
প্রবাসী পিতা-পুত্রের এক মিলিয়ন ডলার ‘আত্মসাত’

প্রবাস ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে সে অর্থ আত্মসাত করে ব্যাক্তিগত বাড়ি-গাড়ি ক্রয়ের অভিযোগ ওঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশী পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্তরা হলেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাসরত বাংলাদেশি নূরুস সাফা ও তার ছেলে মাইদা সাফা। তাদের একটি নির্মাণ ঠিকাদারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের ডিস্ট্রিক্ট আদালতে একটি মামলায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সরকারি পে-চেক প্রেটেকশন প্রোগ্রামের (পিপিপি) আওতায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে নূরুস সাফা নিজেদের ঠিকাদারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন ভাতা ও নির্দিষ্ট খাতে ব্যায় করার জন্য এই ঋণ নেন।

পরে সে অর্থ দিয়ে নিজেদের জন্য দুটি বাড়ি ও বিলাসবহুল বিএমডবিডব্লিউ গাড়ি ক্রয়ের অভিযোগ ওঠে।

মামলাটি বর্তমানে ব্রকলিনের সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি সের্গেই মার্টস-এর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এই খবরে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই মামলায় তাদের কমপক্ষে ১০ থেকে ২৫ বছরের সাজা হতে পারে।

করোনা মহামারীর পর প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে কর্মচারিদের বেতন ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ বাবদ ফেডারেল সরকার পিপিপি ঋণ সুবিধা চালু করে। এই অর্থ পরবর্তীতে মওকুফ করা হয়।

কিন্তু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অনেকেই মিথ্যা তথ্য, বিশেষ করে ভুয়া অফিস ও কর্মচারি দেখিয়ে পিপিপি ঋণের অর্থে বাড়ি ও গাড়ি কিনেছেন। যা গুরুতর অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

মহামারী করোনা শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এসবিএ) পেমেন্ট প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি)-এর অধীনে কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য ঋণগুলি ছোট ব্যবসার জন্য ডিজাইন করা হয়।

একটি পিপিপি লোন পাওয়ার জন্য, নিয়োগকর্তাকে এই মর্মে প্রত্যায়িত করতে হবে, কোভিড-১৯ সংকটের সময় তাদের কর্মশক্তিকে নিযুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বেতন বা অন্যান্য নির্দিষ্ট খরচের জন্য তহবিল ব্যবহার করা হবে।

আদালতসংশ্লিষ্টরা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম থেকে ১ মিলিয়নে ডলারের বেশি প্রতারণার অভিযোগে দুজন ঠিকাদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযুক্ত স্কিমের অংশ হিসাবে বাংলাদেশি পিতা-পুত্র প্রতারণামূলক ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন যা তহবিল প্রাপ্তির জন্য কোম্পানির রাজস্বকে বড় অংকে দেখিয়েছেন।

এরপর সেই তহবিলগুলি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেদুটি বাড়ি ও বিলাসবহুল বিএমডবিডব্লিউ গাড়ি ক্রয় করেছেন। কিন্তু এই অর্থ কর্মীদের এবং অন্যান্য বৈধ ব্যবসায়িক খরচ প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট ছিল।

এই বিষয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি গঞ্জালেজ বলেছেন, ‘এই আসামীরা পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম থেকে ১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি চুরি করার জন্য একটি নির্লজ্জ পরিকল্পনায় জড়িত এবং কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন ছোট ব্যবসার মালিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় সহায়তা করার উদ্দেশ্যে নিজেদের পকেট ভারী করেছে। এই মামলায় ন্যায়বিচার অনুসরণে সহায়তার জন্য আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

জেনারেল কাউন্সেল মিয়ার্স বলেছেন, ‘এই বিষয়ে পদক্ষেপটি ফেডারেল এজেন্সি যেমন কিংস কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস, এসবিএ-এর অফিস অফ ইন্সপেক্টর জেনারেল, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং মেরি ক্যাভেনগ্রোসের সাথে কাজ করা ছোট ব্যবসা প্রশাসনের উন্নত প্রচেষ্টার ফসল।

স্পেশাল এজেন্ট-ইন-চার্জ মেলোন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ মহামারী সম্পর্কিত বেকারত্ব বীমা কর্মসূচির সাথে জড়িত জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত করছে। আমরা এই ধরনের অভিযোগ তদন্ত করতে আমাদের আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের সাথে কাজ চালিয়ে যাব।’

ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস জানিয়েছে, অভিযুক্ত নুরুস সাফা (৬৫) এবং মাইদা সাফা (৩৪)-কে স্থানীয় সময় ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ব্রুকলিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডেনা ডগলাসের সামনে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে প্রথম এবং দ্বিতীয়-ডিগ্রি গ্র্যান্ড লার্সেনি, একটি জাল যন্ত্রের দ্বিতীয়-ডিগ্রি ফৌজদারি দখল এবং প্রথম-ডিগ্রি মিথ্যা ব্যবসার রেকর্ডের অভিযোগ রয়েছে।

আদালতে তাদের জামিন ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয় এবং ৩০ অক্টোবর আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি বলেছেন, তদন্ত অনুসারে নুরুস সাফা হলেন রাহিল কন্ট্রাকটিং ইনকর্পোরেশনের মালিক। তার ছেলে মাইদুল সাফা কোম্পানির প্রজেক্ট এক্সিকিউটিভ।

নুরুস সাফা মোট দুটি পিপিপি ঋণ পেয়েছিলেন। ঋণ হাতে পাওয়ার পর তারা দ্রুত বিলাসবহুল আইটেমসহ ব্যক্তিগত ক্রয়ের জন্য অর্থ ব্যবহার করে। অভিযুক্তরা দুটি পাঁচ বেডরুমের বাড়ি কেনার জন্য মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭০ ডলার খরচ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাড়ি দুটি একটি নিউ জার্সির ভুরিসে এবং অন্যটি পাইন হিলে অবস্থিত।

এছাড়া তিনি ছেলের জন্য ৭১ হাজার ডলার ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ২০২১ সালের বিএমডব্লিউ এম-৫ গাড়ি কিনেন।

এদিকে পিপিপি ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে বাংলাদেশি কমিউনিটির আরো কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পিপিপি ঋণ জালিয়াতি তদন্ত শুরু হয়েছে।

তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শাখা ও কর্মী দেখিয়ে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি পিপিপি ঋণ নিয়ে অভিজাত বাড়ি ও গাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

প্রবাস এর সর্বশেষ খবর

প্রবাস - এর সব খবর



রে