ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪
Sharenews24

এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না: ড. ইউনূস

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৯:০৬:৪৩
এই সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না: ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পাওয়া রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ যাতে হাতছাড়া না হয় সেজন্য শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে ৫৩ বছরে এ সুযোগ আর আসে নাই। যে সুযোগ তোমরা আমাদের দিয়েছো, এ সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এ সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা কোনো রাষ্ট্র আর থাকবে না। তিনি বলেন, এটা যেন শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু তরুণরা এটার হাল ধরেছে। এ কারণে এটা ইউনিক, অন্যন্য দেশ আমরা তৈরি করতে চাই।

রোববার (০৮ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

মতিবিনিময় সভায় ছাত্র সংগঠক এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, এত দিন তারা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে ছিলো এবং আনন্দসহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিলো। এরা কি এখন চুপচাপ বসে থাকবে? না, তারা খুব চেষ্টা করবে আবার তোমাদের দুঃস্বপ্নের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার। শান্তিতে তাদের আবার রাজত্ব চালাতে। তাদের চেষ্টার ত্রুটি করবে না। কাজেই যে কাজ শুরু করেছ, তা সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।

সভার শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত শিক্ষার্থীদের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ সময় হতাহত ব্যক্তিদের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ড. ইউনূস। কাঁদতেও দেখা যায় তাকে।

শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ চিন্তায় অনড় থাকার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে যত পরামর্শ দিক, এটা থেকে বেরিয়ে আসবে, সে পরামর্শ তোমরা গ্রহণ করো না। তোমাদের চিন্তাই স্বচ্ছ ও সঠিক- এটা থেকে সরবে না।

তিনি বলেন, যদি আমরা এ স্বপ্ন থেকে দূরে সরার কোনো কাজ করি, স্মরণ করিয়ে দেবে। আমাদের কোনো ইচ্ছা নেই- এ স্বপ্ন থেকে বাইরে যাওয়ার। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভুলক্রমে আমরা যদি সীমা অতিক্রম করি, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবে। এ শপথ নিয়ে আমরা সবাই একত্র হলাম। যারা আজকে উপস্থিত হতে পারে নাই, তাদের জানিয়ে দিয়ো- আমরা একযোগে, একসঙ্গে এ কাজে নামলাম। এটাকে সফল করবো।

মতবিনিময় সভায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন।

তিনি আরও বলেন, দেখছি আর ভাবছি- কী একটা স্বপ্ন আমাদের সবার সামনে, তোমাদের সামনে, জাতির সামনে তোমরা নিয়ে এসেছো। প্রথমেই যারা শহীদ হয়েছে, তাদের স্মরণ করি। যারা শহীদ হয়েছে, তারা চলে গেছে। তোমাদের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম— তোমরাও শহীদ হয়ে যেতে পারতে। আজকে যারা আমাদের সঙ্গে বসতে পারতো, সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি।

আহতদের দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যখন হাসপাতালে তাদের দেখার জন্য যাই, তাকাতে কষ্ট হয়। একটা ছেলে, একটা মেয়ে এইরকমভাবে কীভাবে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ড. ইউনূস।

আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, একজন তাজা তরুণ রংপুরে আমাকে বললো, ফুটফুটে একটা ছেলে- স্যার, আমি সারাজীবন ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম। এখন দেখেন আমার পা কেটে ফেলেছে… কেঁদে ফেলেছে। ওই পা রাখার উপায় ছিল না। সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে- স্যার, ক্রিকেট খেলবো কী করে?

ক্রিকেট তার মাথা থেকে যাচ্ছে না, পা নাই যতবার দেখি, ততবার মনের সঙ্গে প্রশ্ন জাগে, এটিই আমরা বাংলাদেশ বানিয়েছি যে, এতগুলো তাজা প্রাণ, তাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে, আমরা যারা আজকে এখানে বসে কথা বলছি, তাদের একমাত্র দায়িত্ব তাদের এই ত্যাগ, এই জীবনের বিনিময়ে তারা আমাদের এখানে বসার সুযোগ দিয়েছে, তারা না গেলে আমরা আজকে এখানে বসতে পারতাম না সবাই, আমরা সরকারের মধ্যে বসেছি ... কেউই একই ভূমিকায় আসতে পারতাম না।

ড. ইউনূস বলেন, ‘কালকে একটা হাসপাতালে গেলাম, আবার সেই দৃশ্য কচি কচি প্রাণ, মাথার খুলি উড়ে গেছে। মাথার অর্ধেক নাই, গুলি মাথার ভেতর রয়ে গেছে। রংপুরের হাসপাতালের দৃশ্য, এক্সরে দেখা হচ্ছে- ওখানে দাগ ছোট ছোট ফুটো করা, আমি বুঝতে পারলাম না, আমাকে কী দেখাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কী, এতগুলো গুলি তার শরীরে রয়ে গেছে, সে বেঁচে আছে।

রাবার বুলেট যতবার দেখি, যতবার শুনি, আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করবো। এটার থেকে আমাদের বেরিয়ে যাবার উপায় নাই। আমাদের যোগ্যতা না থাকতে পারে, ক্ষমতা না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রতিজ্ঞা রইলো, আমরা এটা করবো।

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দুনিয়ার মানুষ তোমাদের কাছে শিখতে আসবে, তোমাদের নিয়ে যাবে, বলবে কী মন্ত্র দিয়ে এটা করেছো? এ মন্ত্রটা তারা শিখতে আসবে। সে মন্ত্রটা তোমরাও টের পাচ্ছো না, এটা কীভাবে আসলো? কিন্তু একটা বিরাট মন্ত্র তোমরা আবিষ্কার করেছো। সেটাকে ধরে রাখবে। এ মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায় তাহলে আমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে। সেই দুঃখ যেন আমাদের দেখতে না হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

তারিক/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে